সুন্দর এই পৃথিবীতে শুধু বেঁচে থাকাটাই কি যথেষ্ট আনন্দদায়ক নয়? জীবনতৃষ্ণ কবিরা এমন প্রশ্নের উত্তরে সাগ্রহ সম্মতি জানিয়েছেন বারবার। সুস্থ সুদীর্ঘ আয়ু কে না চায়! কিন্তু চাইলেই তো আর পাওয়া যায় না! চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরিত করার জন্য শরীর ও মনের গঠন সবচেয়ে জরুরি। এবং বিশেষ সেই গঠনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে দীর্ঘ পরামায়ুর আসল রহস্য।
ঝুলিতে শতায়ুর অভিজ্ঞতা—ওঁরা কী বলছেন, শুনুন
#LongLife #দীর্ঘায়ু #সুস্থতা #HealthyCondition
রহস্যের কথা বলছিলাম—বহুকাল বেঁচে থাকার গোপন কথা। না, গোপন আর গোপন নেই। রহস্য ফাঁস করে দিয়েছেন ব্রিটেনের শতায়ু ৩ মহিলা। পাসওয়ার্ড (Password) লিখবার আগে যেমন ইউজারনেম (Username) লিখতে হয়, তেমনই আসুন, পরমায়ুর পাসওয়ার্ড জানবার আগে, জীবনের ময়দানে সেঞ্চুরি হাঁকানো নট আউট ত্রয়ীর পরিচিতি জেনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি ১০৪ বছর বয়সে পড়েছেন ডেজি টেলার (Daisy Taylor)। ২ মেয়ে, ১ ছেলে, ১০ জন নাতিনাতনি, ২৩ পুতিপুতনি ও সিনিয়র কেয়ার হোমের (Senior Care Home) কর্মী-সদস্যদের নিয়ে সুখের সংসার তাঁর। মাত্র ৬০ বছর বয়সে প্রায় ৪ দশকের দাম্পত্যে ইতি টেনে মারা যান ডেজির স্বামী।
ফিলিস কট্রিল(Phyllis Cottrell)। বয়স ১০৩। ২ সন্তান, ৩ নাতিনাতনি। অষ্টাদশী ফিলিসের প্রথম বিয়ে এক বিয়োগান্তক পরিণতি ডেকে এনেছিল। সে অনেক দিন আগের কথা! বিবাহিত জীবন সামান্য গড়াতে না গড়াতেই, যুদ্ধে গিয়ে অকালে প্রাণ হারান স্বামী। তার বছর পাঁচেক পর, চার্লস নামের এক যুবকের সঙ্গে ফের বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ হন ফিলিস কট্রিল। এবারের দাম্পত্য লম্বা হয় ৭০ বছরের বেশি সময়!
এবার আসি এঁদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটজনার গল্পে। নাম তাঁর আইরিন (Irene Rankin)। ১০১টি হেমন্ত অতিক্রান্ত! স্বভাবে সর্বদাই হাসিখুশি।
এই দেখুন, হাসিখুশি থাকার কথা উঠল আইরিনের কথা বলতে গিয়ে। আসলে উত্তর-পূর্ব লন্ডনের কাউন্টি এসেক্সের (Essex) চেমসফোর্ড (chelmsford) শহরে সিনিয়র কেয়ার সেন্টার সব সময় প্রাণোচ্ছল থাকে ডেজি, ফিলিস আর আইরিনকে ঘিরে। ওঁদের সঙ্গে কথা বলাটাই এক বিরল অভিজ্ঞতা। এক আনন্দময় অভিজ্ঞতাও বটে। তিনজনের জীবন মিলিয়ে শতায়ু হওয়ার যে সাধারণ সূত্রগুলির সন্ধান পেয়েছে ইংল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যম, সেগুলি হল—
ডেজি-ফিলিস-আইরিনের মানসিক গঠন অত্যন্ত ইতিবাচক। জীবনে যা কিছু ঘটেছে, সবটাই ওঁরা নিয়েছেন শান্ত চিত্তে। রবি ঠাকুরের ‘ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে’ মনে পড়ছে না? মনে পড়ারই কথা। ইংল্যান্ডের ৩ শতায়ু মহিলা জীবনের সত্যকে সহজভাবেই গ্রহণ করেছেন। অতীতের দিকে মুখ ফিরিয়ে কখনও বাঁচেননি ওঁরা। ওঁদের চোখ থেকেছে সর্বদাই সামনে। ওঁরা প্রত্যেকেই তীব্র আশাবাদী। ৩ জনেই কল্যাণকর পরিণামের প্রতি আস্থাশীল। জগতের প্রতি করুণাময়ী—হৃদয়বতী।
ডেজি-ফিলিস-আইরিন প্রকৃতিপ্রেমীও। দূষণমুক্ত বায়ু ওঁদের আয়ুর অন্যতম ফ্যাক্টর। খাবারদাবারের ক্ষেত্রে ৩ জনেই টাটকা শাকসবজির পক্ষপাতী। এখনও সাধ্যমতো রাঁধতে ভালোবাসেন প্রত্যেকে। শুয়ে-ঝিমিয়ে অলস সময় কাটানো না-পসন্দ। সর্বদাই কিছু না কিছু করছেন ৩ জন। রান্না ছাড়াও আছে নানারকম #শখ বা হবি (#Hobby)। কেউ ফুলগাছ বা প্রিয় পোষ্যের পরিচর্যা করছেন, তো কেউ সেলাইয়ে মন দিয়েছেন—উল বুনছেন। কেউ আবার গান শুনছেন বা গাইছেন আপন মনে। নিজের মতো #নাচানাচি, #যোগব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, #সাঁতার—মোটকথা বসে থাকার পাত্রী কেউ নন! আজও।
এটা ভাবার কোন কারণ নেই—ডেজি, ফিলিস বা আইরিনের জীবন খুব মসৃণ ছিল বা আছে। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ঘাত-প্রতিঘাত—সবটুকুই পেরোতে হয়েছে ওঁদের। সর্বোপরি সামলাতে হয়েছে বিশ্বযুদ্ধের নির্মম ঝাপটা। কিন্তু ওই যে বললাম, জীবনের প্রতি, জীবনের ইতিবাচকতার প্রতি, জগতের অন্তরালে ক্রিয়াশীল কল্যাণকামী শক্তির প্রতি কখনও আস্থা হারাননি ডেজিরা। নিরাশ হননি কখনও।
ও! একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। চুপি-চুপি জানাই আপনাদের। কানাঘুষো শোনা যায়, শতায়ুত্রয়ী নাকি প্রেমও করেন। প্রেমিকরা আছেন কাছেপিঠেই। তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে খুনসুটিও হয় চমৎকার! এখন এই হৃদয় হারানোর কাহিনীকেই দীর্ঘায়ু জীবনোপন্যাসের চালিকাশক্তি বা মোটিভেশন বিবেচনা করবেন কিনা, সেটা অবশ্য আপনাদের নিজেদের ব্যাপার।