উৎসবে উদ্ভাসিত নবদ্বীপ-শান্তিপুর
“রতিসুখসারে গতমভিসারে মদনমনোহরবেশম্।
ন কুরু নিতম্বিনি গমনবিলম্বনমনুসর তং হৃদয়েশম্।।
ধীরসমীরে যমুনাতীরে বসতি বনে বনমালী।
পীনপয়োধরপরিসরমর্দ্দনচঞ্চলকরযুগশালী।।”
রাসপূর্ণিমার এই হল মর্মবাণী। বৈষ্ণব তো বটেই, সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ’ উত্সব। বৈষ্ণবীয় রীতিতে এর উদযাপন হয় শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলাকে কেন্দ্রীয় ভাবনা হিসেবে বিবেচনা ক’রে।
‘রাস’ শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে অবশ্য নানা মুনির নানা মত। পণ্ডিতদের একাংশের দাবি, ‘রাস’ শব্দটি ‘রস’ থেকে উদ্গত। প্রশ্ন হল, শাস্ত্রীয় বিচারে ‘রস’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়? দেখা যাচ্ছে, এই শব্দের অর্থগত ব্যাপ্তি বহুদূর! আনন্দ, ঐশ্বরিক অনুভূতি, ঈশ্বরপ্রেম, অমৃত এবং সার তথা ব্রহ্ম— এ সবই ধরা আছে ওই একটি শব্দের মধ্যে। আবার শাস্ত্রজ্ঞ ও ভাষ্যকারেরা নৃত্যকলার সঙ্গে ‘রাস’-কে যুক্ত করেছেন একপ্রকারের সমবেত চক্রাকার নাচ হিসেবে।
কিন্তু উৎসবটির প্রধান অবলম্বন কী? জানতে ইচ্ছে করে নিশ্চয়ই? এককথায় তা হল আধ্যাত্মিক আনন্দ— শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও গোপিনীরা যা লীলাচ্ছলে আস্বাদন করেন।
এ’রাজ্যে নদিয়া সহ বিভিন্ন জেলায় পালিত হয় রাসপূর্ণিমা। বহির্বঙ্গে ওড়িশা, আসাম, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ (বিশেষত বৃন্দাবন-মথুরা) সহ দেশের নানা প্রান্তে রাসকে ঘিরে দেখা যায় আনন্দ উদ্দীপনা।
পশ্চিমবঙ্গে নবদ্বীপের রাস উৎসব ঘিরে আগ্রহ সর্বাধিক। বিশেষত্ব— বিপুলায়তন বিগ্রহ। এছাড়া শান্তিপুরেও ব্যাপক জনসমাগম হয় সেখানকার রাস উৎসব উপলক্ষ্যে।
এবারও একই ছবি। একই আনন্দের ছবি। রাস এবারও হয়ে উঠেছে সর্বার্থে রসোত্তীর্ণ।