লোকসভায় হাঙ্গামা, নিউজ চ্যানেলে চাতুর্য!

ললিতকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বললে কার লাভ?

‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’! আপাতত কলকাতা পুলিশের নজরে এই সংগঠন। কারণ? লোকসভায় হাঙ্গামার ঘটনায় জড়িত ললিত ঝা (Lalit Jha) ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’র সদস্য। অতএব, সংগঠনটি আতস কাচের তলায়।

জানা যাচ্ছে, ললিত দ্বারভাঙার ছেলে। রবীন্দ্র সরণীতে অস্থায়ী বসবাস। নীলাক্ষ আইচ (Nilaksha Aich), সৌরভ চক্রবর্তী (Saurabh Chakraborty), সায়ন পাল (Sayan Paul) – ‘সাম্যবাদী সুভাষ সভা’র ৩ সদস্য। এদের কারও কারও সঙ্গে ললিত ঝার যোগাযোগ ছিল। সংবাদে প্রকাশ, লোকসভায় হাঙ্গামার দিন নীলাক্ষ ও সৌরভকে হোয়াটসঅ্যাপে বিক্ষোভের ছবি পাঠিয়েছিল ললিত।

Image Courtesy: PTI

যেটা লক্ষণীয়, সেটা হল, সংখ্যাগরিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম ললিত ঝাকে সেদিনের ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বানিয়ে ফেলেছে! কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিও (BJP) ঠিক এটাই চাইছে। কারণ, ললিত ঝাকে লোকসভায় হাঙ্গামার ‘মাস্টারমাইন্ড’ না বানালে, গোটা ঘটনার মূলস্রোত বাংলার দিকে বইয়ে দেওয়া যাবে না। নিম্নকক্ষে সাংসদদের নাকানিচোবানি নিয়ে অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাঙ্ময়, দেশের প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী স্বকৃত ও স্ববিজ্ঞাপিত নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বিষয়ক জবাবদিহির পরিবর্তে কন্সপিরেসি থিওরিতেই শান দিয়েছেন কিনা! অথচ, সংসদের নিম্নকক্ষে ললিত ঢোকেনি। মহীশূরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার (Pratap Simha) অনুমোদনক্রমে, তাঁর পরিচিত সাগর শর্মা (Sagar Sharma) ঢুকেছিল। এবং সঙ্গে মনোরঞ্জন (Manoranjan)। প্রশ্ন হল, হাঙ্গামায় প্রত্যক্ষভাবে না জড়ালে কি ‘মূলচক্রী’ হওয়া যায় না? নিশ্চয় যায়। বিশেষত বাজার-চলতি থ্রিলার থেকে সেই ঝোঁকটাই প্রবল হয় বটে। কিন্তু সংবাদ তো রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা ‘উপন্যাস’ নয়! তত্ত্ব খাড়া করবার আগে তাই যথাযথ প্রামাণ্যের প্রয়োজন হয় সংবাদে। তাহলে কোন তথ্যের ভিত্তিতে ললিত ঝাকে লোকসভায় হাঙ্গামার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে প্রচার করছে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলি? সিআরপিএফের ডিজি অনীশ দয়াল সিংয়ের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি এমন কথা বলেছে তাদের? নাকি, হাঙ্গামার নীল নকশা পৌঁছে গিয়েছে ওইসব সংবাদ মাধ্যমের ‘জগদ্বিখ্যাত সত্যান্বেষী’ রিপোর্টারের হাতে?

না। কোনওটাই ঘটেনি। এর পিছনে শুধু কাজ করছে ২টি ফ্যাক্টর। একটি হল, বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থ, যা পুঁজির মাধ্যমে বহু রমরমা মিডিয়ার প্রধান চালিকাশক্তি (নিউজ এজেন্সিতে ‘বিজেপি নিবিষ্ট’ আদানি আগ্রাসনের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা আগামী দিনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে চলেছে বলে আশঙ্কা)। এবং অন্য ফ্যাক্টরটি হল, সেই বহুশ্রুত ‘টিআরপি’ (TRP)। কিন্তু ‘নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক’ না রাখা দেশবাসী এটাও খেয়াল করবেন নির্ঘাত, ললিতের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কোথাও ‘নাশকতা’ বা ‘দেশদ্রোহিতা’র উল্লেখ নেই। আছে ‘প্রোটেস্ট’ এবং ‘জয় হিন্দ’!

Cover Image Courtesy: ANI