উত্তরপ্রদেশে ৩০০ বছরের স্থাপত্যে আজান বিতর্ক


বিতর্কিত স্থানে আজান ও নামাজ পাঠ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টার অভিযোগ ২১ বছরের এক তরুণের বিরুদ্ধে, সম্প্রীতির বাতাবরণ কলুষিত করায় ক্ষুব্ধ উত্তরপ্রদেশের গ্রামবাসীরা

উত্তরপ্রদেশে ২১ বছরের এক মুসলমান তরুণ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে বিতর্কিত একটি স্থানে আজান দেওয়ার জন্য। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর দায়ে উমর কুরেশি নামে ওই তরুণকে গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিন পেয়ে গিয়েছে কুরেশি।
যে স্থানে কুরেশি আজান দিয়েছে, সেটি ২৫০ থেকে ৩০০ বছরের পুরনো স্থাপত্য। স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের একাংশ দাবি করেন, এটি একটি মসজিদ ছিল। আর হিন্দুরা মনে করেন, মুঘল ও আফগানদের হাতে পরাজয়ের আগে এটি ছিল স্থানীয় হিন্দুরাজার দুর্গ।
প্রকৃতপক্ষে মসজিদ নাকি দুর্গ, তা নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলছে। সমাধান সূত্র মেলেনি। তবে ব্রিটিশ আমলে এলাকার হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের বোঝাপড়া হওয়ার পরে শান্তির আবহ তৈরি হয়। সেইসময়ে সিদ্ধান্ত হয় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কেউই এই বিতর্কিত স্থানকে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না। একথা জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী নীরজ কুমার।
নীরজ কুমারই উমর কুরেশির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। কুরেশি বিতর্কিত ওই স্থান থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে জালালাবাদ শহরের বাসিন্দা। বিতর্কিত স্থানটি আহাস গোস গ্রামে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের সামলি জেলার থানা ভবন ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রাম।
জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর চর্চা। দ্য ওয়ারে এবিষয়ে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, সাম্প্রদায়িক রেষারেষি ছড়ানোর দায়ে কুরেশির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ (২) ও ৬৭ ধারায় মামলা দায়ের হয়। কুরেশি ওই বিতর্কিত স্থানে আজান ও নমাজ পাঠের ছবি ও ভিডিয়ো ফেসবুক ও ইনস্ট্রাগ্রাম পেজে শেয়ারও করেছেন।
দ্য ওয়ারের ওই প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, এ সংক্রান্ত প্রমাণ ওঁদের হাতে আছে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরেশির পোস্ট করা ছবি ও ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, উমর কুরেশির ফেসবুক পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা ৪৪ হাজার। বেশ কিছুদিন ধরে ওই বিতর্কিত স্থাপত্যের জীর্ণাবস্থা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছিলেন কুরেশি। এসম্পর্কিত সর্বশেষ ভিডিয়ো ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন কুরেশি। সেখানে তাকে খালি পায়ে নামাজ পড়তে দেখা দিয়েছে।
নীরজ কুমার নামে যে ব্যক্তি এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি জানিয়েছেন, এর আগে কখনও ওই বিতর্কিত স্থানে কেউ নামাজ পাঠ করেননি। কুরেশির এই কাণ্ডের জেরে স্থানীয় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। কুরেশি নিজেই এখানে নামাজ পাঠ করে ক্ষান্ত হননি, স্থানীয় মানুষজনকেও একই কাজ করতে প্ররোচনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
নীরজ কুমার এও বলেছেন, জীর্ণদশায় থাকা বিতর্কিত ওই স্থাপত্য মসজিদ নাকি হিন্দুরাজার দুর্গ, তা তিনি জানেন না।
এই ঘটনার পরে গাজিয়াবাদের এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভানুপ্রতাপ সিং বলেছেন, ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ আমলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এই প্রাচীন স্থাপত্য ও স্থাপত্য সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের কোনও মানুষই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে ব্যবহার করতে পারবে না। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মুজফফরনগর এবং সামলি জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্ততপক্ষে ৬০জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এছাড়া কয়েক হাজার মানুষ সেইসময়ে ঘরছাড়া হয়।