‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কোচবিহারে ঢোকার পরই তড়িঘড়ি কেন দিল্লি ফিরলেন রাহুল? ভিলেনের ভূমিকায় অধীর চৌধুরী ?

পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শক্তিই দুর্বল করছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জনের ভূমিকা? উঠছে প্রশ্ন, ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কোচবিহারে ঢোকার পরই তড়িঘড়ি কেন দিল্লি ফিরলেন রাহুল?

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সুরে বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি অধীর বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।


৩৫৬ ধারা প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে অধীরের একই অবস্থান রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা উঠছে এই প্রশ্ন। এছাড়া ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বিতর্কিত মন্তব্যগুলি তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক তিক্ত করছে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করে্ন।
বৃহস্পতিবার অসম থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির নেতৃত্বাধীন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কোচবিহারে প্রবেশ করার পর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত, কোচবিহার-অসম সীমানায় রাহুলকে অভ্যর্থনা জানাতে নির্মিত মঞ্চ নিয়ে আপত্তি তোলে পুলিশ। পুলিশ এরপর ওই মঞ্চ খুলে দেওয়ায় স্বভাবতই খানিক উত্তেজনা ছড়ায়।


এদিন রাহুলের নেতৃত্বে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কোচবিহারে ঢুকলেও বাংলায় ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র সূচনা পর্বের দিনই দিল্লি ফিরে গেলেন রাহুল। এব্যাপারে রাহুল জানিয়েছেন, জরুরি কারণবশত দিল্লি পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।
২০২১ সালে এপ্রিল-মে মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি পশ্চিমবঙ্গে এসে সভা করেছিলেন। ২০২২ এবং ২০২৩ সাল পেরিয়ে এরপর বঙ্গভূমিতে পদার্পণ করতে না করতেই রাহুলের দিল্লি প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর জল্পনা। দিল্লিতে পাড়ি দেওয়া কী এমন জরুরি কারণবশত, সেব্যাপারে কিছু জানাননি রাহুল।
তবে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ চলবে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর এবং দার্জিলিং হয়ে বিহারে প্রবেশ করবে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’।


‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় সামিল হতে কোচবিহারে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন। অধীর সাম্প্রতিক কালে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে ধরনের বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেছেন তাতে ২৬টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’য় কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আদৌ সুখের হবে কিনা, এনিয়েও চলেছে চর্চা। আর জোটের নিরাপদ যাত্রাভঙ্গের দায়ে অধীরকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে।
এদিন কোচবিহারে নমুনা মিলল হাতেনাতে। ‘কোচবিহার নাগরিক বৃন্দ’ নামে এক সংগঠনের সমর্থকরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সরাসরি লড়াইয়ে সামিল অধীরের বিরুদ্ধে। কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘বুঝে গেছি অধীরবাবু বাংলায় ৩৫৬ চাই, বিজেপির লক্ষ্যপূরণ! কোনও আশা নাই’। কোনও কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘বিজেপিকে দিচ্ছো সুযোগ বাবু অধীর, মনে রেখো, নই সবাই, বোবা-কালা-বধির’। এই ঘটনা প্রসঙ্গে এখনও অধীর প্রতিক্রিয়া জানাননি।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের গুরুত্বপূ্র্ণ শরিক তৃণমূল কংগ্রেস তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অধীরের নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেসের আচরণ নিয়েও উঠছে সঙ্গত প্রশ্ন। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় যোগ দিতে ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে আসছেন রাহুল গান্ধি, এই গুরুত্বপূর্ণ খবর জোট শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে জানানো কোনও প্রয়োজন বোধ করেনি প্রদেশ কংগ্রেস। যা অসৌজন্যতা।


এদিকে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে একাই লড়বে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বাংলায় জোট না হওয়ার জন্যে দায়ী করেছেন অধীরকে্। প্রদেশ কংগ্রেস এব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া দেয়, তা সময়ের অপেক্ষা।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সামিল দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। এনসিপির শরদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার থেকে আরম্ভ করে জোটে সামিল দলগুলিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াকু ভাবমূর্তি গুরুত্বপূর্ণ আসন পেয়েছে।
নানা ইস্যুতে এই পরিস্থিতিতে বঙ্গের মাটিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে্ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর বিতর্কিত একের পর এক মন্তব্যের জের পড়তে চলেছে স্বভাবতই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ফলে এই রাজ্যে অধরা থাকবে জোটের সাফল্য।