মোদি জমানায় নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৯৬ শতাংশ

মোদি জমানায় গত ৬ বছরে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৯৬ শতাংশ, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ করল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাই।

ভারতে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দুর্লক্ষণ হল এদেশে প্রাচীনকাল থেকে অজস্র দেবী পূজিত হওয়া সত্ত্বেও সমাজে আজও অবহেলিত মেয়েরা। কেবল অবহেলাই নয়, ভারতীয় নাগরিক কন্যাসন্তানরা লাগাতারভাবে যৌন নিগ্রহ এবং ধর্ষণের শিকার। দুভার্গ্যজনক এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া দূরঅস্ত, বরং কন্যাসন্তানদের ওপর নানা ধরনের যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে।
এসম্পর্কে সম্প্রতি তথ্যবহুল রিপোর্ট পেশ করেছে ‘চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ’ (ক্রাই) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র গত কয়েক বছরের তথ্য-পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ক্রাই এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টটি প্রকাশের পরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফলাও করে খবরাখবর করছে জাতীয় সংবাদমাধ্যম।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বধীন এনডিএ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এদেশের কন্যাসন্তানদের সুরক্ষায় গালভরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যক্ষেত্রে যে উল্টোটাই ঘটেছে, ‘চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ’য়ের রিপোর্টে বিশদে ধরা পড়েছে সেই তথ্য।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এনডিএ সরকারের আমলে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় ভারতে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ঘটনাগুলির সবই সরকারিভাবে নথিভুক্ত।
ক্রাইয়ের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ ও ২০২২ সালে ভারতে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা ৬.৯ শতাংশ বাড়ে। ২০২১ সালে নাবালিকা ধর্ষণের ৩৬ হাজার ৩৮১টি ঘটনা নথিভুক্ত হলেও ঠিক এর পরের বছর ২০২২ সালে এধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৯১১। ২০২৩ সালের হিসেব এখনও মেলেনি।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র তথ্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাই ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনাগুলি সম্পর্কে যে পরিসংখ্যান পেশ করেছে, তা দেখে নেওয়া যাক একঝলকে। যেমন, ২০১৬ সালে ভারতে ১৯ হাজার ৭৬৫টি নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। এরপর ২০১৭ সালে এধরনের ২৭ হাজার ৬১৬টি, ২০১৮ সালে ৩০ হাজার ৯১৭টি, ২০১৯ সালে ৩১ হাজার ১৩২ এবং ২০২০ সালে নাবালিকা ধর্ষণের ৩০ হাজার ৭০৫টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাইয়ের গবেষণা বিভাগের প্রধান শুভেন্দু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার নাবালিকাদের অভিভাবক-অভিভাবিকারা ঘটনাগুলি সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করছেন, এই যা ইতিবাচক ব্যাপার। এছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত ঘটনার খবরাখবর প্রকাশ করছে।
এদিকে ক্রাইয়ের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হতে না হতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে আসরে নেমে পড়েছে ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস’। কমিশনের পাল্টা দাবি, সামাজিক সচেতনতা বাড়ছে বলেই নথিভুক্ত হচ্ছে নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনাগুলি। কমিশন এই যুক্তি পেশ করলেও নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে কেন, সেসম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছে কমিশন।