পরীক্ষা ভীতি কাটাতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’য় প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানগর্ভ ভাষণ, এদিকে ভারতে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহননের হার বেড়েছে ৭০ শতাংশ

পরীক্ষা ভীতি কাটাতে ছাত্রছাত্রীদের ধারাবাহিকভাবে উপদেশ দিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবারও দিল্লিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের উদ্দেশে অনেক কথাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশ থেকে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অন্তত ৪ হাজার ছাত্রছাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কিছু উপদেশ দিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। মোদি বলেছেন, ‘পরীক্ষার চাপ সামলাতে ছাত্রছাত্রীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের’। পরীক্ষার চাপ সামলাতে ছাত্রছাত্রীদের শরীরের যত্নআত্তি করারও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদেশের রাজনীতিকরা অনেক সময়েই যে উপদেশগুলো দেন, অনেক সময়েই বাস্তব পরিস্থিতি হয় তার উল্টো। একথা গত ৯ বছরে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জীবনে সত্য হিসেবে প্রমাণিত। এসম্পর্কে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দফতর সংসদে সর্বশেষ যে তথ্য পেশ করা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, লেখাপড়ার মাত্রাতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে গত কয়েক বছরে ভারতে আত্মঘাতী পড়ুয়ার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এদের একাংশ তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।
কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় ভারতে আত্মঘাতী পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫ হাজার ৯৫০জন। ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছে। সংখ্যাটা ১৩ হাজার ৮৯জন। এছাড়া ২০১৯ ও ২০২০ সালে আত্মঘাতী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা যথাক্রমে ১০ হাজার ৩৩৫জন এবং ১২ হাজার ৫২৬জন বলে জানা গিয়েছে। তবে লেখাপড়ার চাপ সামলাতে না পারায় এপর্যন্ত ২০২২ ও ২০২৩ সালে সারা দেশে কতজন ছাত্রছাত্রী উদ্বেগজনিত কারণে আত্মঘাতী হয়েছে, সেই সংখ্যাটা জানা যায়নি এখনও।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারার আতঙ্কে খুব সম্প্রতি রাজস্থানের কোটায় আত্মঘাতী হয়েছে নীহারিকা নামে ১৮ বছরের এক ছাত্রী। সোমবার দিল্লিতে নয়াদিল্লিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’য় অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়ে প্রধানমন্ত্রী নীহারিকার দুভার্গ্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে একটিও শব্দ খরচ করেননি। প্রশ্ন উঠেছে এনিয়েও।
পরীক্ষার চাপে ভীত হয়ে দেশের কোচিং হাব হিসেবে পরিচিত রাজস্থানের কোটায় ২০২৩ সালে মোট ২৯জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া সম্প্রতি কানপুর আইআইটিতে একাধিক গবেষক পড়ুয়া আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল সময়সীমায় ভারতের ছাত্রছাত্রীদের আত্মহননের হার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১ সালে সারা দেশে আত্মঘাতী পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৯৬জন।