মমতার মাস্টারস্টোক ব্যাকফুটে বিরোধীরা

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ২১ ফেব্রুয়ারি ১০০ দিনের কাজে ২১ লক্ষ নাগরিকের প্রাপ্য বকেয়া মেটাবেন মানবিক মমতা, বঞ্চিতদের মধ্যে খুশির হাওয়া। দরিদ্র মানুষের কিছু রোজগারের সংস্থান হত ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজের মাধ্যমে। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা মাসের পর মাস আটকে রাখায় পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত নাগরিক ১০০ দিনের কাজ করেছেন, তাঁদের টাকা আটকে রেখেছে। ওই বকেয়া টাকা মেটানো হবে কবে, এব্যাপারে কেন্দ্রের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। পরিস্থিতি ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই জটিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানবিক পদক্ষেপ নিলেন। গত শুক্রবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে রেড রোডে ধরনায় বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ধরনা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা দেবে কিনা রাজ্য সরকার সেই আশায় বসে থাকবে না। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ২১ ফেব্রুয়ারি। ওইদিনই ১০০ দিনের কাজ করেছেন, এমন ২১ লক্ষ মানুষের ন্যায্য বকেয়া মেটাবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, ওই বকেয়া মেটানোর দাবিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে, সেই লড়াইও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আরও জোরালো করা হবে বলে তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়েছেন।
অভিযোগ, কেবল ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য টাকাই নয়, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এই রাজ্যের বকেয়া টাকাও আটকে রেখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বধীন এনডিএ সরকার।
১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা যে ২১ লক্ষ নাগরিক, সেহিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের বকেয়া সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিপুল পরিমাণ টাকা মানবিক কারণে মানুষকে পরিশোধ করার যে প্রতিশ্রুতি দিলে্ন, তাতে রাজ্য সরকারের ওপর আর্থিক চাপ অনেকটাই বাড়তে চলেছে। সূত্রের খবর, আসন্ন রাজ্য বাজেটে এই খাতে টাকা বরাদ্দ হবে্।
২০২২ সাল থেকে অভিযোগ উঠছে, ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। সেসময়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়নের জেরে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতেও এক্ষেত্রে নজির সৃষ্টিকারী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ’। এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে’।
রেডরোডের ধরনা মঞ্চ থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘১০০ দিনের কাজে আদতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। ক্যাগ রিপোর্টেও এসম্পর্কে উল্লেখ নেই’।
সূত্রের খবর, বকেয়া মেটাতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখেন মমতা। তাতে সাড়া না মেলায় এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা, ঔদাসীন্যের পরোয়া না করে ধরনা মঞ্চ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ২১ লক্ষ মানুষের বকেয়া টাকা মেটানোর কথা ঘোষণা করলেন।
গত ২ এবং ৩ অক্টোবর বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বঞ্চিতরা রাজধানী দিল্লির বুকে আন্দোলন করে এসেছেন।
একই দাবিতে এরপর ৫ অক্টোবর থেকে রাজভবনের সামনে অভিষেকের নেতৃত্বে ধরনা চলে। চাপের মুখে পড়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছিলেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন তিনি।
বলাবাহুল্য, এতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এরপর নতুন বছরে বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে বঞ্চিতদের মধ্যে এখন খুশির হাওয়া। লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মাস্টারস্টোক। বিরোধী নেতারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন কিন্তুু যারা প্রায় দুবছর পর প্রাপ্য টাকা পাবেন তাদের কাছে মমতার প্রতি স্বাভাবিক কৃতজ্ঞতা তৈরি হবেই। যার প্রবাব পড়বে ইভিএমে। এই ইস্যুতে বিরোধীরা যতই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সূর চড়ান না কেন এটা তো সত্য কেন্দ্র সরকার তাদের টাকা দিতে চান না। এই অস্ত্রেই বাজিমাত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।