সারি সারনা ধর্মকে স্বীকৃতির বিষয়ে উদাসীন কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কেন ?

সারি ও সারনা ধর্মকে আলাদা ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম। রাজ্যসভার স্পেশাল মেনশন পর্বে তিনি এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।


তিনি জানান বাংলার দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে লক্ষ লক্ষ সাঁওতাল ,ভূমিজ, সাধন সদন, মুন্ডা ,লোধা ,শবর , ভিরহর ও কুড়মীদের ও একটি অংশ সারি ও সারনা ধর্মকে বংশপরম্পরায় পালন করে আসছেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই ১৭ ফেব্রুয়ারি সারি ও সারনা ধর্মকে স্বতন্ত্র ধর্মের মর্যাদা দেওয়ার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাস করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতবছর কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কোন সাড়া মেলেনি। সে কারণে রাজ্যসভায় বিষয়টি তুলে ধরেন সাংসদ সামিরুল ইসলাম।


সারি ও সারনা ধর্মকে পৃথক স্বীকৃতির জন্য বাংলার পর ঝাড়খন্ড সরকার ও বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে কেন্দীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি শুধুমাত্র এই দুই রাজ্যের বিষয় নয়। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে সারা দেশে ১১ কোটি মানুষ রয়েছেন যারা মূলত প্রকৃতির পূজারি।অথচ জনগনণার সময় হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন ও বৌদ্ধ এই ছয়টি ধর্মকে দিয়েই নাগরিকদের পরিচিতি নথিভূক্ত করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও তপশিলীভূক্ত জনজাতি ও আদবাসীরা ও এদেশের বাসিন্দা। কিন্তু তাদের কোন ধর্মীয় পরিচিতি লেখা থাকে না। আদিবাসী জনজাতি সমাজের দাবী তারা প্রকৃতির পূজারি। সারি ও সারনা তাদের নিজস্ব ধর্ম।সেই ধর্মের স্বীকৃতি মিললে জনগনণার সময় তাদের নিজস্ব ধর্মের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারবেন।হিন্দুত্ববাদীরা অবশ্য মনে করেন আদিবাসী জনজাতিদের পৃথক কোন ধর্ম নেই। তাঁরা সবাই সনাতন হিন্দু ধর্মেরই অংশ। যা মেনে নিতে চান না আদিবাসী জনজাতিরা।

সারি ও সারনা ধর্ম কি

ভগবান ধর্মেশ, সিংবোঙ্গা, হিল্লা, মারাংবুরুর উপাসনা যারা করে তারাই সারনা ধর্মালম্বী। সারনার আরেক নাম হল সৃষ্টি। জল , বায়ু, অগ্নি,ভূমি এবং আকাশ এই পাঁচটি মূল উপাদানের মাধ্যমে যে সৃষ্টি তারাই উপাসক।

সারি সারনা ধর্মকে পৃথক স্বীকৃতির দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলার আদিবাসি জনজাতিরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবীর যৌত্তিকতা মেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা হেমন্ত সোরেন ইতিমধ্যেই তিন বছর আগে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সামিরুল ইসলাম রাজ্যসভার ফের বিষয়টি তোলার ফলে নতুন মাত্রা পেয়েছে।আদিবাসী জনজাতিরাও নতুন করে আন্দোলনে পথে নামার তোড়জোড় শুরু করেছে। তাই লোকসভা ভোটের আগে সারি সারনা ইস্যুতে আবার উত্তাপ ছড়াতে পারে। এখন দেখার কেন্দ্র সরকার ভোটের আগে সারি সারনা ধর্মকে আদৌ স্বীকৃতি দেয় কিনা।