লোকসভা নির্বাচনের আগে সন্দেশখালিতে উদ্দেশ্যপ্ৰণোদিত অশান্তির অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজধর্ম পালনেও কঠোর বার্তা মমতার
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। আর কিছুদিনের মধ্যে ঘোষিত হবে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজ্য রাজনীতি যেভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, এতে কিছু আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বিধানসভাতেও মুখ খুলেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, বিজেপি তথা আরএসএস সন্দেশখালিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গোলমাল পাকাতে চাইছে। সন্দেশখালিতে অশান্তি তৈরির জন্য বহিরাগতদের কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে এও অভিযোগ করেছেন, সন্দেশখালিতে আরএসএস সক্রিয়। আরএসএস এলাকার বাসিন্দা আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে গোলমাল পাকাচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ছাড়াও সন্দেশখালি ইস্যুতে কংগ্রেস, সিপিএম একযোগে আসরে নেমে পড়েছে।
বিধানসভায় মুখ খোলার তিনদিনের মাথায় রবিবার ফের সন্দেশখালির অশান্তি নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতা বীরভূমে সভা করতে গিয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছেন, তা বিচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিজেপি তথা অন্য বিরোধী দলগুলো সন্দেশখালির মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেও এপর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দা কোনও মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে এফআইআর দায়ের করেননি।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, কেবল মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দেশখালিকে ইস্যু বানিয়ে অশান্তি পাকানো আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা।
এদিন বীরভূমের ওই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর রাজকর্ম পালনের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। আদতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জমিবাড়ি দখল হয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবিষয়ে বিজেপি-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবার কী যুক্তি দর্শাবে, এরই অপেক্ষায় বাংলার মানুষ। তবে বিরোধীরা লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার শান্তি-সুস্থিতি রক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেদনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই কর্ণপাত করবেন না, এও স্পষ্ট।
এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, সন্দেশখালির ঘটনার সত্যাসত্য বিচারের পরিবর্তে বিজেপি-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো উত্তেজনা ছড়াতে সক্রিয়। কার্যত সন্দেশখালিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে বিরোধী শিবির।
শনিবার থেকে দিল্লিতে শুরু হওয়া বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে কোনও প্রামাণ্য তথ্য পেশ না করেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাতাবরণ উত্তপ্ত করেছেন। শাহর দাবি, ‘সন্দেশখালির ঘটনা মানবজাতির লজ্জা’। এধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে স্বাধীন ভারতে কখনও ঘটেনি।
দেশের বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা কেন বাড়ছে, এবিষয়ে অবশ্য একটি শব্দও খরচ করেননি শাহ।
সন্দেশখালি-কাণ্ডে রাজ্য প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের দুই ঘনিষ্ঠ অনুচরকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব না করে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরকারের গ্রেফতারের খবর ফলাও করে সম্প্রচারও হয়েছে।
এরপরও বিরোধীরা সন্দেশখালি ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতির বাতাবরণ যেভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে, এবিষয়ে এদিন বীরভূমে সিউড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ইডিকে কাজে লাগিয়ে এবং আরও নানা অছিলায় বিজেপি সন্দেশখালিতে তিলকে তাল করছে’।