সোমনাথ সাবিরদের কথা একটু হলেও ভাবুন 

আবার একটা মায়ের কোল খালি হয়ে গেল।বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা সোমনাথ দেবনাথ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে মহারাষ্ট্রের থানেতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় সোমনাথকে। এই প্রথম নয় বেশ কয়েক বছর ধরে সোমনাথ মহারাষ্ট্রে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু এবার পুজোয় বাড়ির সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিয়ে ফেরা হল না সোমনাথের। তার আগেই বাড়িতে নিয়ে আসা হবে সোমনাথের কফিনবন্দী নিথর দেহ। খবরে প্রকাশ তাঁকে খুন করে শরীর থেকে মাথাকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।এই বর্বরতা, নৃশংসতাকে কোন ভাবেই ব্যাখ্যা করা যাবে না।দেখুন এক গরিব খেটে খাওয়া যুবককে এভাবে হত্যা করা হল।সমাজের কোন অংশ থেকে জোরালো কোন প্রতিবাদ উঠল না, আপনি বলবেন মানুষের এত ভাবার সময় কোথায়।

 আসলে গরিব মানুষে, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের মূল্য সত্যিই আমাদের সমাজে কোন ও দাগ কাটে না।

ঠিক যেমন ভাবে কদিন আগে বাসন্তীর সাবির মল্লিককে হরিয়ানায় পিটিয়ে মারার খবর যখন কাগজে ছোট্ট করে দেখা গেল কিংবা সব নয়, কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি নিয়ে সামান্য খবর দেখানোর চেষ্ঠা পর্যন্ত করলেন না।তখন বোঝা গেল পরিযায়ী শ্রমিকরা আর যাই হোক এদের দিয়ে খবরের টিআরপি বাড়বে না।এদের পিছনে না আছে মধ্যবিত্তের সার্পোর্ট না আছে এলিট ক্লাসের সহানুভূতি। অতএব মাথা না ঘামানোয় ভালো।

অথচ আর জি করের তিলোত্তমার হ্ত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে পথে মানুষের ঢল নেমেছে। ভাল লাগছে বাঙালির বিবেক জেগে উঠেছে। যে বাঙালির বড় অংশ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করতে করতে দুর্নীতিটাকে সমাজের নীতি হিসাবে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে।ভাল লাগছে আমরা আবার খাঁটি হওয়ার চেষ্ঠা করছি ভেবে।

কিন্তু আমাদের মানবতা,আমাদের জাগরণ, আমাদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ, আমাদের ক্রোধের আগুন কি একবার ও সোমনাথ, সাবিরদের জন্য দেখব না। না আমরা ধরেই নিয়েছি বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায় মৃত্যুটা অনিবার্যই। তাই ভাবার প্রয়োজন নেই।

অথচ ভাবুন তো আমাদের রাজ্যে, আমাদের বাংলায় বিহার , উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান সব রাজ্য থেকে হাজার হাজার মানুষ কাজের সূত্রে আসছেন। আমাদের আথিতেয়তা, আমাদের আন্তরিকতার কারণে তাদের তো কোনও দিন কোন অসুবিধার কথা শুনিনি। এই আত্মীয়তাই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু বাংলার শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে কখনো পিটিয়ে মারা হচ্ছে। কখনো পিটিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে। কখনো বাংলাদেশী বলে গারদে ভরছে। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কি এটাই ভবিতব্য।

 আমরা একবারও কি প্রতিবাদের ঢেউ তুলে বলব না, জোর গলায় বলব না, এরা আমার ভাই, আমার দাদা।ওদের ওপর অন্যায় হলে বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। আমাদের গর্জনে সব রাজ্য থেকে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছু ভাবনার পরিসর তৈরি হবে। তা না হলে আর একটা সোমনাথ কিংবা সাবিরের লাশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সমাজ বিপ্লবের মাঝে দয়া করে সোমনাথ সাবিরদের কথা একটু হলেও ভাবুন।