বাংলার লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদের বন্ধু পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ

২০২০ সালের আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে মারণ কোভিড ১৯ হানা দিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে মানব সভ্যতার বড় সংকটের মুখে পড়েছিল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।এক একটা প্রান্ত যেন মৃত্যু উপত্যকা তৈরি হয়েছিল।লাশের পর লাশ। হাসপাতালে, রাস্তা ঘাটে । শেষযাত্রার জন্য প্রিয়জনের দেখা মিলছিল না।শেষকৃত্যের জন্য ও লোক অমিল। সব মিলিয়ে মৃত্যুর পদধ্বনি দুনিয়া জুড়ে।

২৪ মার্চ ২০২০। আমার দেশে আচমকা লকডাউন ঘোষনা করা হল।সব কিছু বন্ধ। সুনশান রাস্তাঘাট দিয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে, কেউ বা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পায়ে হেঁটে দিনের আলো, রাতের আঁধার পেরিয়ে নিজের ভিটে, নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে রত্তনা দিয়েছিল। এ যেন আর একটা অন্য ভারতবর্ষের ছবি ধরা পড়ল।এদের অধিকাংশই শ্রমিক। সেই সময় থেকে পরিচিতি ঘটল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কয়েক লাখ মাইগ্রেন্ট ওয়ারকার বা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে।সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ছবিটা ধরা পড়ল। পথের ক্লান্তি, ক্ষুধা,তৃষ্ণায় অনেকের মাঝপথে চির দিনের মতো পথ চলা থেমে গেছে।যাদের কপাল ভাল তারা সর্বশ্রান্ত হয়ে ফিরেছে।

এই সময় বীরভূমের কয়েক জন তরুন যুবক পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশে নজীর করলেন।সমাজকর্মী বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের নেতৃত্ব শুরু হল গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাণে বাঁচানোর লড়াই।বীরভূমের রিপন, আরিফ, বিশ্বিজিত রবিদাসের মতো একদল তরুন জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। দেশের প্রান্তে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খবর পাওয়া মাত্র সেই রাজ্যের প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে খাবার, ওষুধ, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করল। পাশাপাশি গরিব মানুষের দুবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা থেকে করোনায় মৃতদের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা এই তরুণ, যুবকরাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।

সেই সময় থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য গড়ে তুলেছে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চ। সে সময় থেকে এই সংগঠন বাংলার পরিয়ায়ী শ্রমিকদের মধ্যে নিয়মিত কাজ করে চলেছেন এই সংগঠন। কোন অর্থ নেই শুধুমাত্র শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা তাদের এই কাজ এগিয়ে চলেছে।

বাংলা থেকে বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা যখন বুঝে উঠতে পারেন না সেই মূহুর্তে বুঝে কি করণীয়। তখন তাদের পাশে ছুটে যায় রিপন, রকি, আরিফ, হোসেনরা।প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃতদেহ আনা থেকে শুরু করে, যে সংস্থায় কাজ করত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। মৃতের পরিবারেরআর্থিক সাহায্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা জন্য লাগাতার চেষ্ঠা চালান পরিযায়ী ঐক মঞ্চের সদস্যরা।পা্শাপাশি পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের সঙ্গে যোগযোগ সবটাই করে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের সদস্য সদস্যারা।এই মহুর্তে বাংলার ১৪ টি জেলায় তাদের সংগঠন রয়েছে এবং ১ লক্ষ ৪৭ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত করা আছে।পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বিষয়ে তাদের কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

অলোকা কুন্ড, সাবিনা ইয়াসিন, বিদ্যাসাগর মেটে, তারিক আনোয়ার সহ সংগঠনের সবাই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি রেডলাইট কেউ বিক্রি হয়ে গেলে তাদের উদ্ধারের কাজকরে এইসংগঠনই।

বাংলার পরিয়ায়ী শ্রমিক খোঁজ খবর নিতে বা বিপদে পড়লে পরিযায়ী ঐক্যমঞ্চের সদস্যরা পৌঁচ্ছে যাচ্ছেন দিল্লি রাজস্থান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে। আবার ভিন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা উড়িষ্যা বা গুজরাট, রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যে আক্রান্তের খবর পেলেই পরিবারের সঙ্গে নিরন্তন যোগাযোগ রাখা থেকে শুরু করে তাদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার কাজ করে এই যুবকেরাই।

মন খারাপ করে যখন কোথাও দুর্ঘনায় শ্রমিকেক মৃত্যুর খবর আসে। বাসন্তীর সাবির মল্লিকে যেভাবে হরিয়ানায় পিটিয়ে খুন করেছে গোরক্ষক বাহিনী তখন প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পরিযায়ী ঐক্য মঞ্চ। আবার মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়ে নলহাটির সোমনাথ দেবনাথে নৃশংস খুনের খবর পেয়ে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান সকলে। সব দেখে মনে হয় পরিযায়ী ঐক্যমঞ্চ শুধুমাত্র সংগঠন নয়। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটা পরিবার। সব সময় সুখে দু:খে. বিপদে আপদে, কোন রকম আর্থিক প্রাপ্তি ছাড়াই আন্তরিকতার সঙ্গে পিছিয়ে পড়া শ্রমজীবি মানুষের পাশে পরিযায়ী ঐক্য মঞ্চের সদস্য সদস্যা থাকেন সব সময়। ধন্যবাদ নব যৌবনের ,মানবতার দিশারিদের।