ন্যায় বিচার চেয়ে যদি রাত দখল সফল হয় তাহলে শব্দ দৈত্যের রাত দখল ঠেকাতেও তো সক্রিয় হওয়া যায়।

ছবি সৌজন্য দি হিন্দু

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য :আবার একটি আতঙ্কের রাত এগিয়ে আসছে। এ রাত হল কালীপুজো বা দীপাবলীর রাত। এই রাতের অনুষঙ্গ জুড়ে আছে আলোর উৎসব। তবে, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো এই রাত জুড়ে থাকে শব্দ দৈত্যের তান্ডব। আমরা সবাই জানি উৎসব হলো মানব সভ্যতার এক অপরিহার্য অংশ। অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষে উৎসবের উৎসে থাকে মনের স্বস্তি ও আনন্দ। অথচ উৎসব কে ঢাল করে চলে শব্দ বর্জিত নিরঙ্কুশ প্রাধান্য। এই বিভৎসতা মুছতে অনেক আইন হয়েছে। রয়েছে নজরদারির নানান ব্যবস্থা। কিন্তু, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো আইন বা নজরদারি কোনো সুরাহা করতে পারে নি। এর উপযুক্ত উপশম করতে পারে সচেতনতা। যা নিয়ে দিস্তে দিস্তে লেখা হয়েছে কিন্তু আলোর রোশনাই তে তিমির বিনাশ দূর অস্ত। দীপাবলীর রাতের দখল নেয় শব্দবাজিতে বলিয়ান তিমির বিলাসীরা।
এই বিভৎস অভিজ্ঞতা আমাদের সবার ই কম বেশি রয়েছে। ক্যান্সার বা অন্যান্য দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের বাড়ির পাশে উৎকট শব্দে বাজি ফাটাতে আমরা দেখেছি। এই অবস্থায় বয়স্ক মানুষরা ছাড় পাবেন তা ভাবাই মূর্খতা। যাদের স্নায়ু দুর্বল বা হৃদযন্ত্র সবল নয় তাদের জন্য তো এই রাত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকের প্রান ও গিয়েছে। হাসপাতাল গুলিতে গেলে দেখা যায় বার্ন কেস সামলাতে চিকিৎসক রা হিমসিম খাচ্ছেন। আর যাদের বাড়িতে পোষ্য রয়েছে তাদের করুণ অভিজ্ঞতাও শোনা যায়। প্রতি বছর সেই পোষ্যদের প্রচন্ড যন্ত্রণার মধ্যে রাত কাটে। অনেক পোষ্যের খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গৃহপালিত যারা তাদের তবু একটু আরাম দেওয়ার চেষ্টা চলে কিন্তু রাস্তার প্রানীদের অবস্থা অবর্ণনীয়। তাদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অপরিসীম চেষ্টা চালিয়ে যায়।
উৎসব পালনের উৎকট উন্মাদনা যে অন্যের প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে এই বোধ অসাড় হয়ে যায়। আমাদের দেশে সব পরিসরে ই রাজনীতির অবাধ পদচারণা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলকেই সক্রিয় হতে দেখা যায় না। তবে শুধু রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। একটা বড় অংশের মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন ও রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের রাজ্যে এক অভিনব ঘটনার সাক্ষী। অভয়ার বিচার চেয়ে নাগরিক সমাজের রাত দখল দেখা গিয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে নাগরিক সমাজ। আমি এই স্বত্বা অপরের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে আমরা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে। দীপাবলীর রাতেও কি তার রেশ এবার দেখা যাবে? এই আবহে কি একটু মানবিক একটু দায়িত্ব শীল হতে পারিনা আমরা? প্রাণী , মানুষ, প্রকৃতির জন্য সংবেদনশীলতা তো আমাদের মধ্যে রয়েছে। আর জি কর ঘটনার পরে এমন একটি সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করলে অন্যায়ের বোঝা বাড়বে। ন্যায় বিচার চেয়ে যদি রাত দখলে সাড়া দেওয়া যায় তাহলে শব্দ দৈত্যের রাত দখল ঠেকাতেও তো সক্রিয় হওয়া যায়। যারা রাজ্য জুড়ে এই মুহূর্তে সদর্থক ভাবনার অনুগামী তারা কি একটু ভেবে দেখবেন?