হরিয়ানায় গোরক্ষক বাহিনীর হাতে নিহত বাংলার সাবির মল্লিক আদৌ গোমাংস রান্না করেনি

মনিরুল হোসেন : ২৭ আগস্ট ২০২৪। মঙ্গলবার। পেশায় ফেরিওয়ালা ঘটনাস্থল চরকি দাদরি,হরিয়ানা। আসিরউদ্দিন ও তার বন্ধু বছর ২২ এর সাবির মল্লিক কে পুরানো প্লাস্টিক বিক্রি করবে বলে এক দোকানে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে আগে থেকেই বসে ছিল বেশ কয়েকজন যুবক। তাদের পরিচয় হরিয়ানার গোরক্ষক বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা দুজনে উপরে চড়াও হয়। মারধোর শুরু হয়। তাদের অভিযোগ তাদের ঝুপড়ির মধ্যে গোমাংস রান্না করা হয়েছে। মারধরের মাঝে আসির উদ্দিন কোনক্রমে তাদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচেন। এই সময় সাবির মল্লিক কে একটি বাইকে চাপিয়ে কয়েকজন যুবক অন্যত্র নিয়ে যায়। রাস্তার উপর বহু লোকের সামনে সাবিরের ওপর চলে গণধোলাই। কিছুক্ষণ পর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাবির। ওই অবস্থায় সাবিরকে ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যাই গো রক্ষক বাহিনী। বহুক্ষণ পর ড্রেনের মধ্যে থেকে সাবিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা ২২ বছরের যুবক সাবির কে এভাবেই মর্মান্তিকভাবে নৃশংসভাবে খুন করা হলো। সাবিরের তিন বছরের কন্যা তাঁর স্ত্রী ও পরিবার অথৈ জলে পড়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্য সরকার চকরি সাবিরের স্ত্রীকে দিয়েছেন গোটা পরিবারের পাশে আছেন। মাঝে দুমাস কেটে গেছে, স্বামী স্ত্রী কন্যা কেমন আছে জানা নেই।
দুমাস পর যেটা জানা গেল গোমাংস খাওয়ার অভিযোগে পিটিয়ে মারা হয়েছিল সাবির কে। অথচ ওই মাংস আদৌ গোমাংস ছিল না। ল্যাবরেটরির রিপোর্টে তা প্রমান হয়েছে। সাবিরের মৃত্যুর পর সাবিরের ঝুপড়ি থেকে হরিয়ানার পুলিশ ওই রান্না মাংস সংগ্রহ করে ফরিদাবাদের একটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল । সেই রিপোর্টেই দেখা গেছে আদৌ গো মাংস ছিল না বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কে দাদরির সহকারী পুলিশ সুপার ভরত ভূষণ জানিয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ সুপার পূজা বশিষ্ঠ জানিয়েছেন এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।, আরও ৬ জন যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি।


গত পাঁচ বছর ধরে সাবির মল্লিক ও তার আত্মীয়রা হরিয়ানায় ফেরিওয়ালার ব্যবসা করে খেতেন। তারা খুব ভালো করে জানতেন হরিয়ানায় গো মাংস খাওয়া অপরাধ। এবং সেটা মেনে চলতেন। তবু মুসলিম হওয়ার কারণে সন্দেহের বশে নির্মম হয়ে মরতে হলো সাবির মল্লিককে। সাবির একা নয় আসাম থেকে আসা বেশ কিছু মুসলিম শ্রমিককেও এই বিপদের মুখে পড়তে হয়েছিল। পড়তে হয়েছিল বললে ভুল হবে এখনো পড়তে হচ্ছে। জানা নেই এই অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আদৌ কোন কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে কিনা। কেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই গোরক্ষক বাহিনীর হয়ে সাফাই করে বিবৃতি দেন। সেই মামলার পরিণতি কি হতে পারে খুব সহজে আন্দাজ করা যায়। হরিয়ানার ভোটের আগে ধর্মের নামে যে একটা উন্মাদনার ঝিগির তোলার দরকার ছিল। তা মনে হয়। এজন্যই মাঝে মাঝে এই নৃশংসতা অন্য রাজনৈতিক রূপ পায়। এভাবে আর কত অসহায় সাবির মল্লিকদের সন্দেহের বশে খুন হতে হবে সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত জানা নেই।।