মনিরুল হোসেন : আগ্নেয়গিরির উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। কোটা বিরোধী আন্দোলন দিয়ে যার শুরু করেছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্রসমাজ। সেই আন্দোলনকে রুখতে গিয়ে হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছিল। সেখান থেকেই এই আন্দোলনের ছাত্র থেকে সাধারণ মানুষের গণআন্দোলনের রূপ পেয়েছিল। সেখান থেকে দাবি উঠেছিল দাবি এক, দফা এক ,হাসিনার পদত্যাগ। আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে একটি গান প্রায় বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিবাদের গান হয়ে উঠেছিল “দেশটা তোমার বাপের নাকি- করছো ছলাকলা/ কিছু বললেই ধরছো চেপে /জনগণের গলা”। বাংলাদেশের নাগরিকদের বড় অংশের গণরোষের মুখে পড়ে দেশ থেকে লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর বাংলাদেশ জুড়ে নৈরাজ্যের ছবি তার সকলেরই প্রায় জানা।বিশেষ করে হাসিনার অবর্তমানে ধর্মীয় মৌলবাদীদের আস্ফালন বেড়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা। আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান। আবার উল্টোদিকে সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উপাসনাস্থল পাহারা দিতে দেখা গেছে মুসলমানদের। আক্রান্ত হয়েছে চাকমারা। এক প্রকার বাধ্য হয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে হিন্দু বৌদ্ধ চাকমা প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ফতোয়ায় বন্ধ করতে হয়েছে সুফি সাধনার সাধন ক্ষেত্র বিভিন্ন দরগায় কাওয়ালী। রাস্তাঘাটে মেয়েদের পোশাক-আশাকে সবক শেখাতে পথে নামতে দেখা গেছে কিছু ধর্মীয় উন্মাদদের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সাক্ষী থেকেছে, আর এক মাৎসন্যায়ের। তাই হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুদিনের মধ্যেই মোহভঙ্গ হতে শুরু করে বাংলাদেশের পরিবর্তনকামী জনগণের।
আশা করা গিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ইউনুস হাল ধরার পর এই অব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু না পরিবর্তন হয়নি। এখনো পর্যন্ত মোঃ ইউনুস বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছেন। তারা যা দাবি করছেন তাতেই সরকারি সিলমোহর দিয়ে চলেছেন মোঃ ইউনুস। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টেরপ্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে আরও ১০ জন বিচারপতিকে অন্যায় ভাবে তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গারদে ভরেছে। প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস হয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, না হলে দখল নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সম্প্রতি বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি ছাত্রলীগের কোন সদস্যকে সরকারি চাকরি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হবে না বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, আওয়ামী লীগ যাতে আগামী দিনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে তা নিয়েও কোমর বেঁধে নেমেছে মোঃ ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুধু আওয়ামী লীগ নয় আসলে তারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত সব রাজনৈতিক দলকেই কার্যত লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। তার নতুন নমুনা পাওয়া গেল। মোহাম্মদ এরশাদের তৈরি জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ এর ঘটনা। হাসিনা জমানায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কেও কার্যত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বারবার নির্বাচন ত্বরান্বিত করার দাবি জানানো হলেও সে বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। উল্টে পার্টির চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে পর্যন্ত বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের যে অবস্থা এই পরিবর্তনের পরিবর্তনের জন্য আবার একটা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে আছে সীমান্তপারের বাঙালিরা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে দু একজন ছাত্র নেতা যে ভাবে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কে বিশেষ করে বাংলাদেশের গরিব খেটে খাওয়া মানুষকে নতুন করে সর্বনাশের মুখে দাঁড় করিয়েছে তাতে বাংলাদেশ যতটা এগিয়েছিল হয়তো তার চেয়ে বেশি পিছিয়ে যাবে। তাই হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গিয়ে যে জনতা পথে নেমেছিল এখন তাদের পস্তাতে হচ্ছে। হয়ত আবার এক বিদ্রোহের রাস্তা ক্রমশ চওড়া হচ্ছে।