মনিরুল হোসেন : দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা। আক্রান্তের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের। কাশ্মীর উপত্যকায় গত এক মাসে ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।
২০ অক্টোবর কাশ্মীরের শোনমার্গে সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমনে এক ডাক্তারসহ ছয় জন পরিযায়ী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। একটি টানেল তৈরির কাজ করছিলেন তারা। কাজ শেষে ফেরার পথে তাদের জঙ্গিরা গুলি করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। সকলেই বিহার থেকে শ্রমিক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কদিন পরেই কাশ্মীরের বদগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর আহত হয় উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা দুই পরিযায়ী শ্রমিক সুফিয়ান ও উসমান।
এবার গত কয়েক মাসে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্তের ঘটনা তুলে ধরা যাক। লোকসভা নির্বাচনের পর উড়িষ্যায় বিজেপি ক্ষমতা দখলের পর উড়িষ্যায় বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করতেন বাংলাদেশী বলে তাদের বিতাড়ন করা হয়। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার কয়েকে মাসের মধ্যে হরিয়ানায় বাসন্তীর বাসিন্দা সাবির মল্লিককে গোমাংস ভক্ষণ করেছে সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে গোরক্ষক বাহিনী। যদিও পরে রিপোর্টে জানা গেছে আদৌ গোমাংস ছিল না।এরপর একের পর এক ঘটনা ঘটনায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হয়েছে।রাজস্থানে মালদার মতি আলি নামে এক পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মহারাষ্ট্রে বীরভূমের নলহাটির যুবক সোমনাথ দের মুন্ডুকাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি নির্মাণ কর্মী হিসাবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। আবার এি রাজ্যেই মালদার আর এক পরিয়ায়ী শ্রমিক আব্দুর রহমানকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়। এভাবেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নৃসংসভাবে খুন হতে হচ্ছে।
প্রশ্ন এত নারকীয় ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে তবু পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট কোন আইনী ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্র সরকার বরাবর পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে উদাসীন। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিয়ায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে । গঠন করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদ। অথচ অন্য রাজ্যে শ্রমিক হিসাবে তাদের কোন আইনি অধিকার নেই। নুন্যতম মজুরি পর্যন্ত দেওয়া হয়না। সুরক্ষার গ্যারান্টি পর্যন্ত নেই। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রান্তের ঘটনা বেড়েই চলেছে।