কংগ্রেস সহ বিরোধী এবং শরিক দলের চাপে বিজেপি জাতি গণনায় সম্মত হতে পারে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য : অবশেষে জনগণনা নিয়ে নড়ে চড়ে বসতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই জনগণনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো জাতি ভিত্তিক গণনা। ২০১১ সালের জনগণনা সমীক্ষায় হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তফসিলি জাতি ও জনজাতি ভুক্ত মানুষের গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু, অন্যান্য শ্রেনী ও ওবিসি
সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষের সংখ্যা গোনা হয়নি। দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরাও এই গণনার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা সংস্থা পিউ রিসার্চ এর অনুমান ২০১১ সালের সুমারিতে যে হিসাব পাওয়া গিয়েছে, ভারতে পিছিয়ে থাকা জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। এর প্রকৃত হিসেব পাওয়া গেলে তা এই পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য উন্নয়ন নীতি তৈরি ও রূপায়ণের পথ প্রশস্ত করবে। যদিও উচ্চবর্ণের রাজনীতির কারবারিদের পক্ষে তা সুখকর হবে না। কারণ, পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণের দাবি জোরালো হবে। সেক্ষেত্রে বর্ণ হিন্দুদের স্বার্থে ঘা লাগবে।
অনেকেই মনে করছেন, সম্ভবত এই কারণেই ২০১৪ পর্যন্ত জনগণনা ঠেকিয়ে রেখেছিল বিজেপি। ভোটের ফলে বিজেপিকে নীতীশ কুমারের দল জে ডি ইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপির মুখাপেক্ষী করেছে । জে ডি ইউ যে জাতি গণনায় আগ্ৰহী সেকথা পরিষ্কার জানিয়েছেন নীতিশ। ফলে একদিকে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দল এবং শরিক নীতীশ এই দুয়ের চাপে বিজেপি হয়তো জাতি গণনায় সম্মত হতে পারে।
দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনগণনার তাৎপর্য রয়েছে। ২০২৬ য়ের পরে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করতে চায় বিজেপি। সংসদে আসন সংখ্যা বেড়ে ৭০০ বা ৮০০ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অথবা বর্তমান আসনসংখ্যা এক রেখে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আসনের অনুপাত বদলাতে পারে। দুটোর যে কোনোটিতেই পাল্লা ঝুঁকবে উত্তর ভারতের জনবহুল কয়েকটি রাজ্যের দিকে। জনগণনার ফল থেকে বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া সুবিধা হবে।
জনগণনা শুধু দেশের মোট জনসংখ্যা কত তা পরিমাপ করে না। কোনো দেশের জনসংখ্যাকে নিবিড় ভাবে চেনার পথ হলো এই গণনা। কোন জনগোষ্ঠী কতটা অসুবিধার মধ্যে রয়েছে, কোন অঞ্চলের উন্নয়নের কাজ এগোয়নি, কোথায় কারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হারে পিছিয়ে রয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায় এই গণনা থেকে। তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরির জন্য এই গণনার কোনো বিকল্প নেই। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি থমকে থাকার জন্য দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা কতটা বাধা পড়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিস্তর চর্চা হয়েছে। তবে কী কারণে চার বছর ধরে এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজটি ফেলে ফেলে রাখা হল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এর কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি।