প্যাঁচে বুলডোজার বাবা যোগী আদিত্যনাথ

লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

“মহিলা, শিশু ও বয়স্কদের রাতারাতি গৃহহীন করে বুলডোজার চালানো টা শিউরে ওঠার মতো দৃশ্য। এ এমন এক নৈরাজ্যের কথা মনে পড়ায় যেখানে ক্ষমতাই শেষ কথা “।‌ না এ কোনো নাট্যমঞ্চ, সিনেমার পর্দা বা রাজনৈতিক মঞ্চে বলা সংলাপ নয়। সম্প্রতি ‘বুলডোজার বিচার’ য়ের নিদানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে।

সেই মামলার ৯৫ পাতার রায়ে এই কথা বলেছেন বিচারপতি বি আর গাভাই ও কে ভি বিশ্বনাথন। দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরও বলেছে, কেউ অপরাধে অভিযুক্ত, শুধুমাত্র এই যুক্তিতে প্রশাসনের খেয়াল খুশিতে তাঁর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়াটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।
শীর্ষ আদালতের রায়ে যথার্থ ভাবেই ভারতীয় সংবিধানের মূল চেহারাটা ফুটে উঠেছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, কেউ কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলেই তাঁর বাড়ি বা ব্যাবসায়িক সম্পত্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া ভারতীয় সংবিধান সম্মত নয়। সংবিধানের ১৪২ নম্বর ধারা অনুসারে শীর্ষ আদালতের ক্ষমতা বলে বাড়ি বা সম্পত্তি ভাঙ্গা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলেছেন, ‘ মালিককে ১৫ দিনের আগাম শোকজ নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। নোটিশে বলতে হবে কেন ভাঙা ছাড়া অন্য পথ নেই। এছাড়াও পুলিশ ও আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ভাঙার ভিডিও করতে হবে। এছাড়া আরও কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে নির্দেশিকা লঙ্ঘিত হলে ভাঙা নির্মাণ আবার তৈরি করে দেওয়ার আর্থিক দায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিতে হবে।


শুরু প্রথমে উত্তরপ্রদেশে। তারপরে উত্তরাখণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ সহ আরও কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে। এই তালিকায় রয়েছে তৎকালীন কংগ্রেস শাসিত রাজ্য রাজস্থানও। এই রাজ্যে গুলিতে ন্যায় দন্ডের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল বুলডোজার। আর এই ‘বুলডোজার বিচারের’ নিশানায় মূলতঃ সংখ্যালঘু ও সমাজের প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া মানুষরাই রয়েছেন । এখনো উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙার ঘটনায় রাশ পড়েনি। এই কাজে বিশেষ কুখ্যাতি কুড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের আমল। অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায় যে কাজ কে অসাংবিধানিক বলেছে তা শুরু করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ধর্মীয় মেরুকরণ বা বিভাজনের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত আদিত্যনাথ এই কাজে এতটাই “খ্যাতি” কুড়োন যে তাঁর ভক্তরা তাঁকে বুলডোজার বাবা আখ্যা দেন। যোগীর দেখানো পথে অনুপ্রাণিত হয়ে বুলডোজার দিয়ে বিশেষত সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষদের বাড়ি বা সম্পত্তি ভাঙায় বিশেষ দক্ষতা দেখান মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তার ভক্তরাও তাকে “বুলডোজার মামা” আখ্যা দেন। শীর্ষ আদালত বলেছে, একটি বাড়ি অনেক আশা দিয়ে গড়া। সাংবিধানিক অপরাধে অভিযুক্ত কাউকে সাজা দিতে গিয়ে তার সেই বাড়ি ভেঙে দেওয়া যায় না। বিচারপতি বি আর গাভাই নিজের লেখা রায়ের শুরুতে বলেছেন একটি কবিতা “অপনা ঘর হো, অপনা অঙ্গন হো, ইস খোয়াব মে হর কোই জিতা হ্যায়”।