শাহি জামা মসজিদ ঘিরে এত রক্ত ঝরছে কেন?

Sambal Sahi Masjid Controversy

লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

উত্তর প্রদেশের এক জনপদ সম্ভল গত এক সপ্তাহ ধরে হিংসার আঁচে উত্তপ্ত। কিছু দিন আগে আদালতের নির্দেশে সম্ভলের শাহি জামা মসজিদের পর্যবেক্ষণ ঘিরে অশান্তি ছড়ায়। অশান্তির জেরে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের এই শহরে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকজন। হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে এই মসজিদ তৈরি হয়েছে বলে বিচার চেয়ে আবেদন জমা পড়ে আদালতে। এই ধরনের আবেদনের ফলে বারানসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, মথুরার শাহী ঈদগাহ এবং মধ্যপ্রদেশের কামাল মৌলা মসজিদ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সবকটি মামলাতেই ধর্মীয় স্থানের বর্তমান চেহারা বদলের আবেদন জানানো হয়েছে। দেশের ধর্ম স্থানের স্থিতাবস্থা নিয়ে place of worship act ,1991আইন রয়েছে। সেই আইনে চেহারা বদল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১৯ শে নভেম্বর সম্ভলের district and session court য়ের senior division য়ের civil judge আদিত্য সিনহার এজলাসে শাহী জামা মসজিদ নিয়ে স্থানীয় এক মোহন্তের আবেদন গৃহীত হয়। ওই আবেদনে বলা হয় ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবর এক হিন্দু মন্দির ভেঙে সেখানে এই মসজিদ নির্মাণ করান। আবেদন গৃহীত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিচারক সিনহা মসজিদে গিয়ে পর্যবেক্ষণর জন্য একজন advocate commissioner নিয়োগ করেন। ১৯ শে নভেম্বরের পরে ২৪ শে নভেম্বর দ্বিতীয় বার আদালতের নির্দেশে পর্যবেক্ষণে গেলে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায় পুলিশ। Archaeological survey of India তে শাহী জামা মসজিদ ১৯২০ সালের ২২ ডিসেম্বর ১৯০৪ সালের ancient monuments preservation act অনুসারে নথিভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ শাহী জামা মসজিদ protected monument হিসেবেই নথিভুক্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, archaeological survey of India র website য়ে ও কেন্দ্রীয় ভাবে সংরক্ষিত monument of national importance য়ের তালিকায় এই মসজিদের নাম রয়েছে।এই পরিস্থিতিতে মসজিদ নিয়ে মামলায় যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হল মামলা গৃহীত হওয়ার পরে দুপক্ষকে তাদের আবেদনের সপক্ষে প্রাথমিক প্রমাণ পেশ করতে না বলে কেন তড়িঘড়ি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হল। এক্ষেত্রে কি বলছে places of worship act,1991? এই আইন বলছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের আগে যেখানে যে ধর্ম স্থান যে চেহারায় ছিল তেমনই থাকবে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারে এই আইনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ধর্মীয় স্থান নিয়ে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ বিতর্ক থেকে রক্ষা করতে এই আইন আনা হয়। তবে, বাবরি মসজিদ – রামজন্মভূমি মামলায় এই আইন কে সরিয়ে রাখে শীর্ষ আদালত। আদালতের বক্তব্য ছিল এই আইন যখন পাশ হয় তার আগেই বাবরি মসজিদ মামলা আদালতে গৃহীত হয়েছিল। এখন মথুরা সহ যে চারটি ধর্ম স্থান নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা চলছে সেই ক্ষেত্রে ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি U U Lalit কেন্দ্রীয় সরকার কে দুসপ্তাহের মধ্যে অবস্থান জানানোর নির্দেশ দেয়। দুবছর কেটে গেলেও তার কেন্দ্র এখনো তাদের অবস্থান জানায়নি। অন্যদিকে, আর এস এস প্রধান মোহন ভাগবত সব মসজিদের নিচেই হিন্দু মন্দির খোঁজা উচিত নয় বললেও , সেই চেষ্টায় দাঁড়ি চিহ্ন পড়ার কোনো লক্ষন নেই ।