লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
লিটানির তীরে কি অবশেষে শান্তি ফিরল? এর উত্তর এখনও অজানা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ইজরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্টীর মধ্যে যে যুদ্ধ চলছিল আপাতত তাতে ছেদ পড়ল। গত বুধবার আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছে। তবে প্যালেস্তাইনে যুদ্ধের যে ভয়াবহতা চলছে তা চলবে। কোন শর্তে যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে দুপক্ষ রাজি হল? কী আছে সে চুক্তি তে? এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞদের অনুমান ২০০৬ সালে এই দুই যুযুধান নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষের মধ্যে রাষ্ট্র সঙ্ঘের প্রস্তাব ১৭০১ অনুসারে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছিল, এবার ও ওই প্রস্তাবের দুপক্ষ চুক্তি করেছে। তাই মনে করা হচ্ছে যে চুক্তি মেনে হিজবুল্লাহ বাহিনী লেবাননের লিটানি নদীর উত্তরাঞ্চল থেকে সরে আসবে , আর নদীর দক্ষিনাঞ্চল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করবে ইজরায়েল। দক্ষিণ লেবাননের এই অংশে দু পক্ষের মাঝে থাকবে লেবাননের সামরিক বাহিনী। ওই অংশে এই বাহিনীই শুধু অস্ত্র বহন করতে পারবে। ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহকে ৬০ দিনের মধ্যে চুক্তি অনুসারে নির্দিষ্ট অঞ্চলে সরে আসতে হবে। তবে, এই চুক্তি তে হিজবুল্লাহ কে সামগ্ৰিক ভাবে অস্ত্র সংবরণ করতে বলা হয় নি। অন্যদিকে, ইজরায়েল জানিয়েছে হিজবুল্লাহ চুক্তি না মানলে তারা ফের আক্রমণে ফিরবে। এর পাশাপাশি, এই চুক্তি তে দুপক্ষকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে ফ্রান্স ও আমেরিকার মধ্যস্থতা নিয়েও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। প্যালেস্টাইনে আর লেবাননে ইজরায়েলি বাহিনীর যে ভয়ঙ্কর আক্রমণ চলছে তাতে প্রায় ৪৫০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। অগনিত মানুষ আহত, গৃহহীন। এই ভয়াবহতা থামানোর জন্য ইজরায়েলের উপরে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বেড়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে এই ধ্বংস লীলা কে ‘গণহত্যা’ বলেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্ৰেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই চাপের মাঝেও ইজরায়েল আক্রমণের ঝাঁঝ বিন্দুমাত্র কমায়নি। তাহলে এখন কেন যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে সই করল ইজরায়েল? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনটি সম্ভাব্য কারণ জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ইজরায়েলের অভ্যন্তরে লেবানন ও গাজায় যুদ্ধ বিরতির পক্ষে কন্ঠস্বর জোরালো হচ্ছে। দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন। সব মিলিয়ে দেশের মধ্যে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এবং সামরিক নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে। দ্বিতীয় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে, লেবাননে ইজরায়েলের আক্রমণের অতীত অভিজ্ঞতা যথেষ্ট সমস্যাদীর্ণ। লেবাননে যে ধরনের প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয় তাতে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর মনোবল ও শারীরিক ক্ষমতায় যথেষ্ট সমস্যা হয়। এই কারণে হিজবুল্লাহ কিছুটা দূর্বল হতেই চুক্তির পথে পা বাড়ালো ইজরায়েল। তৃতীয় কারণ হিসেবে হিজবুল্লাহর অনমনীয় মনোভাব এবং প্রতিরোধের তীব্র ইচ্ছাকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত, শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই নিহত এবং দলীয় পরিকাঠামোর বিশাল ক্ষতি হলেও হিজবুল্লাহ নমনীয় হয়নি। তবে, সবমিলিয়ে ইজরায়েল – হিজবুল্লাহ যুদ্ধের কারণগুলি সবকটিই রয়ে গিয়েছে। তাই লিটানি নদীর পাড়ে আপাতত অস্ত্র সংবরণ হলেও তা কতদিন বজায় থাকবে এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।