লেখক – বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
“শান্তি”। বিশ্বজুড়ে এই শব্দ ক্রমশ বিলীয়মান। ভূখন্ডের পর ভূখন্ড জুড়ে যুদ্ধ, হিংসা, দ্বেষ, ক্ষুধা, বৈষম্যের বিস্তারে কোথায় শান্তি? তবু ও তো আশা জাগে। কোনো কোনো মানুষকে ঘিরে লতানে গাছের মতো সেই আশা ছড়ায়। যেমন অংসান সুচি। সামরিক শাসনের বর্ম যা বর্তমানের মিয়ানমার। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শান্তি, স্বস্তি ছিল দূরাগত শব্দ। সেখানে সুস্থ -সমাজের আশা জাগিয়েছিলেন সুচি। এই আশা জাগিয়ে রাখতে সামরিক সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অকল্পনীয় ক্লেশ, শাস্তি ভোগ করতে হলেও তিনি নত হননি। এই প্রতিস্পর্ধাকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯১ সালে মর্তের সেরা সম্মান নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতে। যে হাতে গনতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার পুরষ্কার উঠেছিল সেই হাত ই নিষ্ক্রিয় ছিল রোহিঙ্গা দের উপর কল্পনাতীত নির্যাতনে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়িত করতে যখন গণহত্যা, লুঠ, ঘরবাড়ি পোড়ানো চলছিল সেই সময় সরকারের জাতীয় উপদেষ্টা তথা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন সুচি। দেশের একটি সম্প্রদায় ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ালেও বৌদ্ধ সুচি, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সুচি সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন। বিশ্বজুড়ে যে সুশীল সমাজ সুচির মাথায় মুক্তিযুদ্ধের মুকুট পরিয়ে ছিলেন তাঁরা হতাশ। সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠলেও রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে এক পা ও এগোন নি সুচি।এশিয়ায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের আর এক পথ হারানো বাহিনীর নায়ক মহম্মদ ইউনুস।
![](https://amritabazar.in/wp-content/uploads/2024/11/1000012409.webp)
বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রুরাল ইকোনমিক্স প্রোগ্ৰামের গবেষণা করতে করতে কৃষকদের নিয়ে নবযুগ তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন ইউনুস। এই কৃষকদের খামার থেকেই গ্ৰামীন ব্যাঙ্কের ভিত্তি রচিত হয় ১৯৭৬ সালে। পরবর্তীতে ক্ষুদ্র ঋণ নামে এক নতুন ধারনা নিয়ে ১৯৮৩ সালে পূর্নাঙ্গ ব্যাঙ্ক হিসেবে জন্ম হয় গ্ৰামীন ব্যাঙ্কের। গরীব মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্ৰামীন ব্যাঙ্কের সাফল্য উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেও মডেল হিসেবে ব্যবহার হয়। ২০০৬ সালে এই বিশাল কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে অধ্যাপক ইউনুস ও তাঁর গ্ৰামীন ব্যাঙ্ককে শান্তি পুরস্কার দেয় নোবেল কমিটি। সেই ইউনুস আছে রাজনৈতিক পালাবদলের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। পদ্মাপাড়ে অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে ডালপালা ছড়াচ্ছে মৌলবাদ। জেলায় জেলায় হিন্দুদের প্রান, সম্পত্তি, ভবিষ্যৎ মৌলবাদের থাবায় রক্তাক্ত, বিষন্ন। আমরা ভেবেছিলাম মানবকল্যাণের অগ্ৰদূত যখন সরকারের মাথা তখন নিরুপদ্রব থাকবেন বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিক সমাজ। সেই আশা এখন মরিচীকা। প্রতি দিন দেশের জেলায় জেলায় হিন্দুদের ধন , মান, জীবন বিপর্যস্ত হলেও সরকারের প্রধানের শুধু বিবৃতি দিয়েই দ্বায়িত্ব শেষ। অন্ধ শক্তির দাপটের সামনে শান্তির নোবেল জয়ী যেন মূর্ত পরিহাস।