লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল এতদিন যে গণ- অভ্যুত্থানের আলখাল্লা পরেছিল তা খসে পড়েছে । স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব’ এর আড়াল সরিয়ে বেরিয়ে এসেছে সন্ত্রাসের হিমশীতল হাত। যতদিন যাচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ প্রবল হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দু ও বৌদ্ধরা। ধ্বংস হচ্ছে কয়েকশো বছরের পুরোনো সুফি মাজার। পৃথিবীর সামনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট বর্তমান বাংলাদেশ সরকারে গভীর সংখ্যালঘু বিদ্বেষ। ভারত সরকার গভীর ভাবেই বিচলিত। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে দিল্লি। একে কোনভাবেই ভারতের অযাচিত পদক্ষেপ বলা যাবে না। United States commission on religious freedom এর প্রধান জনি মুর আন্তর্জাতিক উদ্বেগকেও সামনে এনে দিয়েছেন। গত জুলাই মাস থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন চড়া সুরে ভারত বিরোধিতা শুরু করে। হিংসার আগুন দাবানলের মতো গ্ৰাস করে গ্ৰাম থেকে মফস্বল শহর পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাকেও। রবীন্দ্র বিরোধীতা, হিন্দু মন্দির ও বিগ্ৰহ ভাঙ্গার পাশাপাশি বৌদ্ধদের উপরেও চলছে অমানুষিক অত্যাচার। এই সর্বগ্রাসী বিপদের মাঝে আরেক বিপদ ও উঁকি মারছে । ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ যে ভূখণ্ডে হয় তার আঁচ প্রতিবেশী ভূখণ্ডকেও বিপন্ন করে। এর শিকড় রয়ে গিয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের মধ্যে। পাশাপাশি রয়েছে পাকিস্তানের মিলিটারি establishment এর ফনা নামিয়ে দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিকাশ। স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা – মেঘনার আঁচল ঢাকা ভূখণ্ডে ‘বঙ্গীয় তালিবান ‘ দের অবাধ পদচারণায় পাকিস্তান উজ্জীবিত। অশুভ শক্তি যাতে এর সুযোগ নিতে না পারে তার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে দেশের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলিকে। যেহেতু ঘর- গেরস্থালির নাড়ি কেটে দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল বাংলাদেশ তাই কাগজে কলমে গঙ্গা পদ্মার মাঝে সীমান্ত জাগলেও মস্তিষ্কে থেকে গিয়েছে হৃদয় বিনিময়ের আলপথ। এখনো বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি হিন্দুর বসত। তাঁদের কয়েক কোটি আত্মীয় রয়েছেন পশ্চিম বঙ্গ , ত্রিপুরা, অসম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এর বাইরে সময়ের আঁচড়ে ঘটি বাঙাল দ্বন্দ্ব বিবর্ণ হওয়ায় বন্ধুর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। ওপারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, লুটতরাজের আতঙ্কে এদের ও বিনিদ্র রাত কাটছে। আশা করা যায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছে আন্তর্জাতিক দুনিয়া। এখন ই তো সোনালী সময় আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করার। ঢাকার কান্ডারীরা যাতে নড়ে চড়ে বসে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এই অবাধ হিংসার পিছনে রাজনৈতিক মদত দাতারাও আজ চিহ্নিত। তাদেরকে ও সতর্ক করতে হবে। সবার উপরে যে কোনো পথেই হোক সংখ্যালঘুদের উপর এই অকল্পনীয় নির্যাতন বন্ধ করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের। মহম্মদ ইউনুস সহ রাষ্ট্রের উপদেষ্টা দের এটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার সপক্ষে বিবৃতি, অন্য দিকে প্রচ্ছন্ন মদত এই দ্বিচারিতা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। ইউনূসের নেতৃত্বে যে কলঙ্ক বাংলাদেশের ইতিহাস কে ঢাকছে তা তাঁকেই মুছতে হবে। সবশেষে আশা সভ্যতার সংকট মুহূর্তে বিশ্ব চরাচর জুড়ে প্রতিবাদের পাখা যেন গুটিয়ে না যায়।