লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
রাজনৈতিক মঞ্চে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে বিতর্কে জড়ান মিঠুন চক্রবর্তী। হয়তো বিতর্ক আর সমালোচনার কারণে নিজের রাজনৈতিক সত্ত্বাকে শীতঘুমে পাঠিয়েছেন মহানায়ক। কিন্তু, এই তো এসেছে প্রমাণ করার সময়। সেদিন যে কথা তিনি বলেছিলেন তার তাঁর মুখের বুলি মাত্র মনের কথা নয়। এখনো গঙ্গা যেমন তেমনই মেঘনা, পদ্মা বিধৌত ভূখণ্ডে তাঁর অগণন ভক্ত। বর্তমান সময়ে বঙ্গ তালিবানদের দাপটে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতির উপর কার্ফু জারির চেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে সব বিশিষ্ট বাঙালির ই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মন্ত্র উচ্চারণের উপযুক্ত সময়। ভক্তের মনে উপবিষ্ট মহানায়ক যদি প্রতিবাদের ভাষা জোগান তাহলে তার অগণিত মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারেন। ভেবে দেখতে পারেন মহানায়ক মিঠুন। গত অগাস্ট মাস থেকে মিথ্যার ডানায় ভর করে অন্ধকার নেমেছে বাংলাদেশে। ৭১ এর মুক্তি যুদ্ধের পর বাংলাদেশের থেকে ১০০০ মাইলের ও বেশি দূরত্বে থাকা অন্ধ শক্তি মাঝে মধ্যে ডানা ঝাপটালেও বাঙালি তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধর্ম এবং ভাষা মোটামুটি নিরাপদ রাখতে পেরেছিল। আজ সেই নিরাপত্তা বিপন্ন। ডিজিটাল মিথ্যার সুনামিতে ভাসছে বাংলাদেশ। WhatsApp এ, রিলসে ছড়াচ্ছে রবীন্দ্রনাথ নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি তে বাধা দিয়েছিলেন। পূর্ববঙ্গে শিক্ষা বিস্তার রুখতে গড়ের মাঠে সভা করেছিলেন। ‘আমার সোনার বাংলা’ কে জাতীয় সঙ্গীতের আসন থেকে নামানোর তোরজোড় চলছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দু বাংলার মাঝের কাঁটাতার যাঁর শরীরের প্রতিটি কোষ কে বেদনার্ত করে রেখেছিল সেই ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববরেণ্য রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানের নাম বদলের চেষ্টা হচ্ছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি বেদখল হয়ে গিয়েছে। যিনি বলেছিলেন ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে ‘ সেই লালনে সাঁই এর আখড়ায় হামলা হচ্ছে। আর এই তালিবানি উল্লাস ও উন্মাদনা মগজে প্রতিষ্ঠার পৃষ্টপোষক এখন ওপারের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালীরা। সমাজের সব পরিসরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যা ছড়ানোর কুশলী কারিগর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম রয়েছে নাৎসি গোয়েবলস এর। এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশে থাকলে দেখতে পেতেন সেই কাজ কত সহজ হয়ে গিয়েছে। মোবাইলের বোতাম টিপে WhatsApp এ , facebook এ , Instagram এ, রিলস বা স্টোরি বানিয়ে কত সহজে লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। মিথ্যার রঙ মাখানোর জন্য রয়েছে কৃত্রিম মেধা সম্পন্ন হরেক রকমের অ্যাপ। এই মিথ্যার ঢেউয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এগুলোর সত্যতা যাচাই করে নেওয়া এখন আশু কর্তব্য। তবেই না কবি ইকবালের অমোঘ উচ্চারণ ছড়িয়ে যাবে দগ্ধ, ক্ষতবিক্ষত প্রান্তরে, ‘ মানুষ ই মানুষ কে পৌঁছে দেবে অসময়ে থেকে সুসময়ে ‘।