মুক্ত চিন্তার বধ্যভূমি, অন্ধ শক্তির মৃগয়া ভূমি আজকের বাংলাদেশ

Restless Bangladesh

লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

“Every age has its own Fascism”উদ্ধৃতি টি ইহুদি রসায়ন বিজ্ঞানী Primo Levi র। যিনি নাৎসি জার্মানিতে কুখ্যাত concentration camp আউসুইৎজে প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাশা খেলেছিলেন। ইতিহাসে কলঙ্কিত সেই বধ্যভূমি থেকে মুক্ত আকাশের নিচে দিন যাপন কালে তাঁর এই উপলব্ধি। ১৯৮৭ সালে লেভির মৃত্যু হয়। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে দেখতে পেতেন তাঁর ওই উপলব্ধি পৃথিবী জুড়ে কতো সজীব। হিটলারের উত্থানের সময় থেকে ফ্যাসিজম নিয়ে, ফ্যাসিজমের চরিত্র ও তার প্রকাশ নিয়ে বহু গবেষণা, বহু লেখা হয়েছে। সেদিন জর্মনিতে যা হয়েছিল আজ তার রূপ বদলেছে। বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে বলশালী নেতা আর তাদের আধিপত্যবাদী রাজর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ গভীর হচ্ছে। এই অন্ধ শক্তির ই আজ মৃগয়া ভূমি আমাদের প্রতিবেশী সূর্যের নিচে বাংলাদেশ।বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে। আর সেই নির্মম সত্য কে কল্পনায় ভরকরে রচিত ‘গল্প বা উপন্যাস’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন বর্তমান শাসকদের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই অগাস্ট মাস থেকে ই গণ অভ্যুত্থান। প্রগতির রাজনীতির দস্তানায় ইসলামী মৌলবাদী নেতাদের দাপট মুড়ে রাখার চেষ্টা ছিল। ইতিহাসের পা ফেলায় সেই মোড়ক খসে পড়েছে। উদারপন্থী মুসলিম নাগরিকরাও ত্রস্ত – সন্ত্রস্ত । মুক্ত চিন্তার অপরাধে এই বুঝি দরজায় কড়া নাড়া শুরু হল। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পৃথিবীর বহু ভূখণ্ড জুড়ে ই বিপন্নতা বাড়ছে। কোথাও হিন্দুরা, কোথাও মুসলমানরা, কোথাও ইহুদি রা, কোথাও খৃষ্টান রাত আবার কোথাও প্রচলিত ধর্মের বাইরে যারা সেই আদিবাসীরা বিপন্ন বোধ করছেন। যদি কেউ আমার কাছে জানতে চান আমার ধর্ম কি? আমি বলি ধর্ম অর্থে যদি religion বলেন তা নেই। ধর্ম অর্থে আমার কাছে প্রপার্টি। এই জগতে কয়লা থেকে সোনা প্রত্যেক বস্তুর ই প্রপার্টি আছে। মানুষের এই প্রপার্টি হল মনুষ্যত্ব। ১৯৭৫ সালে মুজিবুর হত্যা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছিল। সাম্প্রদায়িক তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানের পূর্ব অংশে ১৯৭১ সালে ভাষা, সংস্কৃতি, সাম্যের ভিত্তিতে রাজনীতি এক নতুন দেশ গড়েছিল। কিন্তু, তা যে খুব শক্ত জমিতে ছিল না তার প্রমাণ কয়েক বছরের মধ্যেই মুজিব হত্যা। হাসিনার আমলেও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি, ধর্ম স্থান , প্রান আক্রান্ত হয়েছে। একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার হত্যা হয়েছে। সামনে ই স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন হবে। এই অনুষ্ঠানের প্রচারে রাস্তায় নেমেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কর্মচারী, গবেষক ও ছাত্ররা। কিন্তু কোন স্বাধীনতার বিজয় দিবস উদযাপন হবে? ৭১ য়ের নাকি মৌলবাদী দাপটের চাদরে ঢাকা বর্তমানের দ্বিতীয় স্বাধীনতার? বিশেষত, যখন ৭১ য়ের স্মৃতি বর্তমানে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে মুছে দেওয়ার কর্মসূচি চলছে। যারা বিজয় দিবসের উদযাপনের প্রচারে পথে নামছেন তারা স্মরণে রাখতে পারেন রবীন্দ্রনাথের “পৃথিবী” কবিতার শ্বাশ্বত লাইন ” দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানব দমনের”। স্মরণে রাখতে পারেন রবীন্দ্রনাথের দেবতার থানে কিন্তু মনুষ্যত্বের বিগ্ৰহ ছিল। তাই দানব দমনের মন্ত্র মানুষকেই পড়তে হবে।