লেখক-বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে এক গরীব ফলওয়ালার গায়ে আগুন দিয়ে মৃত্যু তিউনিশিয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভে আগুন ধরিয়ে ছিল। একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারের উদ্ধত মাথা টেনে রাস্তায় মিশিয়ে ছিল হাভাতে মহম্মদ বুয়া জিজির মৃত্যু । জীবিত বুয়াজিজির অপুষ্টি তে ভোগা পালকের মতো হাল্কা শরীর মৃত্যু তে পাহাড়ের মতো ভারি হয়ে চেপে বসেছিল প্রতিবেশী দেশের একনায়কতন্ত্রের ঘাড়ে। জনতার রোষ আছড়ে পড়েছিল আলজেরিয়া, জর্ডান, মিশর, ইয়েমেন, বাহরিন, লিবিয়া ও মরক্কোর মতো দেশগুলিতে। গণ বিপ্লবের জেরে মিশরের হোসনি মোবারক,লিবিয়ার মহম্মদ গাদ্দাফির মতো হাতে মাথা কাটা নেতা – প্রভুরা হয় নিহত নয়তো রাজপাট ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। আরব দুনিয়ায় গণ অভ্যুত্থানের স্রোত সমাজ মাধ্যমে ” আরব বসন্ত” আখ্যা পেয়েছিল। আরব বসন্তের রেশ ছুঁয়েছিল সিরয়াকেও। দূর্নীতি, বেকারত্ব, সন্ত্রাসের শাসন, সমাজের সর্বস্তরে বৈষম্য, মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০১১সাল থেকে সরকার বিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের আসাদ পরিবারের সাম্রাজ্যের পতন হলো। সপরিবার প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। কোথায় গিয়েছেন তা নিয়ে নানা গুঞ্জন। এই সময় কালে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক মৃত্যু সংঘর্ষে, অনেক মৃত্যু খাদ্য, চিকিৎসার অভাবে। সিরিয়ায় মানুষের গড় আয়ু ৭০ থেকে ৫৫ তে নেমে এসেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ উদ্বাস্তু। কেউ নিজভূমে ঠাঁই নাড়া, কেউ আশ্রিত পরভূমে। ২০১৫ সালে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড়সড় সাফল্য পেলেও ধীরে ধীরে আসাদের জমি আলগা হচ্ছিল। সম্প্রতি আসানদের শক্তি দাতা রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে, ইরান ও হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে জড়িয়ে থাকায় আসাদকে সমরাস্ত্র জোগানোর অবস্থায় ছিল না। নএই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে অতর্কিতে বিদ্যুৎ গতিতে আক্রমণ চালিয়ে ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিদ্রোহের লক্ষ্য পূরণ হলো। আমাদের বাংলা ভাষাতে বচন আছে ” চকচক করলেই সোনা হয় না” । বাংলাদেশের মতোই গণ বিদ্রোহ, গণ বিপ্লব, স্বৈরাচারের অবসান এই শব্দগুলোর আড়ালে সিরিয়াতে ও অশনিসংকেত আছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরে আমরা এখন ঘর পোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরাই। বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা ততটা না হলেও সিরিয়ার সঙ্গে ও ভারতের সুসম্পর্ক বহুদিনের । সিরিয়ার রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে জহরলাল নেহরুর নামে রাস্তা রয়েছে। ১৯৫৬ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে সিরিয়ার বানিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান চলে আসছে। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে তথ্য প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র গড়তে সিরিয়াকে বেশ বড় অঙ্কের অনুদান ও ঋণ দিয়েছিল ভারত । কাশ্মীর নিয়ে যখন পাকিস্তানের প্রভাবে মুসলিম দুনিয়া ভারতের সমালোচনা করছে তখন সিরিয়া ভারতের পাশেই থেকেছে। কাশ্মীর থেকে ৩৭১ ধারা প্রত্যাহার এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষনার পরে সিরিয়া বিষয়টি কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবৃতি দিয়েছিল। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার দাবার বোর্ড বদলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেদিকে নজর রাখতে হচ্ছে ভারত কে। সিরিয়ায় গণ বিপ্লবের নায়ক যাকে বলা হচ্ছে আবু মহম্মদ আল জোলানির অতীত যথেষ্ট উদ্বেগ জনক। আল কায়েদার গর্ভ থেকে জন্ম আল জোলানির দল হায়াত তাহরির আল শামের। ২০১৫ সালে জোলানি আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ার ইডলিব প্রদেশে আল জোলানি সমান্তরাল সরকার গড়ে প্রশাসন চালাচ্ছিলেন। তাঁর আমলে স্বৈরতান্ত্রিকতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারর অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই, আসাদ পরবর্তি সিরিয়া কোন পথে এগোবে মৌলবাদ না গণতন্ত্র সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।