বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন ❗ নীরব কেন নরেন্দ্র মোদী ❗ ব্যাকফুটে রাজ্য বিজেপি। প্রতিবাদের প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

গত এক দশকে ভোট রাজনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘন্টা বাজালেই রাজনৈতিক দল গুলি যে যার মতো হাতিয়ার নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমে পড়ে। ওই সময়টুকুর জন্য ভোটাররাই তাদের জীবন দেবতা। সেই দেবতার কাছে পৌঁছানোর জন্য নানা কলাকৌশল চলতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নীতি নৈতিকতার সীমা পেরিয়ে যায়। মানুষের মৃত্যু বা বিপর্যয় ও তখন রাজনৈতিক লাভ আদায়ের উপকরণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখন আবার ভোটের বেশ কিছু টা আগে থেকেই ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু হয়। এই যেমন ২০২৬এর গোড়ায় পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভা ভোট। সেই ভোটকে নজরে রেখে বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতন কে উর্বর জমি ধরে নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা ছকে নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তুখোড় রাজনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে রাজ্য বিজেপির সেই ছক ভোঁতা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সাল থেকে পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানরা তৃনমূল কে ভোট দিয়ে আসছেন। এই অঙ্ক মাথায় রেখে রাজ্য বিজেপির প্রধান তাস ভোটে মেরুকরণ। এই সময় বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে হিন্দু নিপীড়নের ঘটনা বিজেপির কাছে সুবর্ণ সুযোগ মনে হয়েছিল। দিল্লি বারবার বার্তা পাঠানো সত্ত্বেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ কমেনি। দু দেশের সম্পর্কে ক্রমশ সংঘাত মং হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি সীমান্ত বন্ধ করো, বাংলাদেশী পণ্য বর্জন করো ইত্যাদি দাবি তুলে জমি তৈরি করতে চাইছিল। ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ” বাংলাদেশে হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। ভারত সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে অবিলম্বে সে দেশে শান্তি বাহিনী পাঠাতে আবেদন করুক”। জাতীয় এবং রাজ্য রাজনীতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিক মমতা জানেন, সংশ্লিষ্ট দেশ নিজে না চাইলে খুব কম ক্ষেত্রেই কোনো দেশের ভিতরে শান্তি সেনা যায়। তাহলে মমতা বললেন কেন? মমতা জানেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ফসল গোলায় তুলতে কতদূর যেতে পারে। মমতা এ ও জানেন ঘর লাগোয়া বাংলাদেশে কিছু বিপর্যয় হলে এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং ঘরে বাইরে অত্যন্ত ওজনদার নেত্রীর বক্তব্যে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাও জানেন। ফলে জেনে বুঝে তিনি যে রাজনৈতিক চাল দিয়েছেন তাতে রাজ্য বিজেপি পছন্দের মাঠেও ফিকে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই থামেন নি। বাংলাদেশের মৌলবাদী নেতারা যে আবোল তাবোল বকছেন তার ও বড় জবাব দিয়েছেন। মমতা শান্তি বাহিনী পাঠানোর কথা বলে প্রকারান্তরে কেন্দ্রের ই সুবিধে করে দিয়েছেন। কেন্দ্র নিজে যা বলতে পারছেনা তা যদি মমতা বলেন, তার দায় সাউথ ব্লক কে নিতে হচ্ছে না। অথচ, একটি বেশ চাপের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শান্তি বাহিনী পাঠানোর পরিস্থিতি বা সুযোগ না থাকলেও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক পাঠানোর দাবি উঠতে পারে। এই মুহূর্তে দেশে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মমতা যে ভাবে সরব হয়েছেন তাতে রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন। এর পাশাপাশি, দিঘায় নির্মীয়মান জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাসকে সঙ্গী করে রাজ্য বিজেপি কে আরও কোনঠাসা করে দিয়েছেন। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কে গ্ৰেফতার করা নিয়ে বাংলাদেশ উত্তাল। বিষয়টি কে নিয়ে এপারে পদ্ম শিবির ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় ইসকন কর্তা কে সঙ্গে নিয়ে মন্দির পরিদর্শন অত্যন্ত কৌশলী “রাজনৈতিক পদক্ষেপ” বলে মনে করা হচ্ছে। বাধ্যবাধকতা থেকে দিল্লি কে যখন দৌত এবং কূটনীতির পথে হাঁটতে হচ্ছে তখন তার বাইরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ই প্রধান রাজনৈতিক মুখ হয়ে উঠেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *