লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
আইনজীবীদের অনেকে বলছেন প্রাক্তন যে বিবাদের দরজা খুলে দিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না তাতে আগল দিলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি পি ভি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ বলেছে, আপাতত আর জ্ঞানবাপী বা সম্ভল নয়। যতদিন মামলার নিষ্পত্তি না হচ্ছে ততদিন আর কোন মসজিদের নীচে মন্দির রয়েছে বলে আর্জি মেনে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেওয়া যাবে না। মসজিদ, ঈদগাহ, দরগার নীচে মন্দির রয়েছে এই দাবিতে নতুন মামলাও আর গ্ৰাহ্য করা যাবে না। রামজন্মভূমি – বাবরি মসজিদ বিতর্কে দেশে অশান্তি ছড়াচ্ছিল। সেই সময় আর যাতে মন্দির – মসজিদ ঘিরে বিবাদ না ছড়ায় সেই লক্ষ্যে ১৯৯১সালে উপাসনাস্থল আইন পাস হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে কোনো ধর্মীয় উপাসনাস্থলের চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যেখানে যে ধর্মের উপাসনা স্থল ছিল, তেমনটিই থাকবে। বিজেপি শিবিরের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় এই আইন কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন। এই মামলার শুনানি তে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী উপাসনাস্থলের চরিত্র বদল চেয়ে মামলা করা যায় না। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে মধ্যে তাদের বক্তব্য জানায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন্দ্র দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে নাকি ১৯৯১ সালের আইনের বিরোধিতা করবে। রামজন্মভূমি মামলায় অযোধ্যায় রামমন্দির গড়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবু সেই রায়েও পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ উপাসনাস্থল আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ১৯৯১ সালের এই আইন ” সংবিধানের মূল ভিত্তির “ই একটি অংশ। যদিও, এই আইন লাগু হওয়ার আগেই রামজন্মভূমি মামলা আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে তাই ওই মামলাকে বাইরে রাখা হয়েছে।এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন আদালতে ধর্ম স্থানের চরিত্র বদল চেয়ে মামলা চলছে। মধ্যপ্রদেশে কামাল মৌলা মসজিদ, মথুরায় শাহী ঈদগাহ মসজিদ, বারানসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, লক্ষ্ণৌ এর তিলে ওয়ালি মসজিদ, বাদাউঁর শাহী জামে মসজিদ, আজমের এর আজমের শরিফ দরগা, জৌনপুরের অটল মসজিদ, দিল্লির কুয়াত-উল- ইসলাম মসজিদ, ব্যাঙ্গালুরুর মালালি জুমা মসজিদ এবং সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ নিয়ে চরিত্র বদলের আর্জিতে মামলা চলছে। এই সব কটি ক্ষেত্রেই শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। অথচ, ইলহাবাদ হাইকোর্ট যখন জ্ঞানবাপী মসজিদে প্রত্ন সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি ভি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাতে স্থগিতাদেশ দেন নি। দেশের একদিকে যেমন সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে অন্যদিকে এই ঝোঁক কেন বিপজ্জনক তা নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। তবে, ভোটের ফসল কুড়োনোর জন্য সংখ্যাগুরুর শক্তি কে আগ্ৰাসী করে তোলার চেষ্টা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝা যায় যখন ইলহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর কুমার যাদব বলেন সংখ্যাগুরুর ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ চলাটাই আইন। এই কথা টি তিনি বলেছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে। একজন বিচারপতি কীভাবে এরকম অনুষ্ঠানে যান বা বক্তৃতা করেন সে প্রশ্ন এখন অবান্তর হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এপার থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কে ‘গণতন্ত্রের ধর্ম ‘স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের জন্য যে নিয়ম নিজ দেশে তার বিপরীত অবস্থান। এই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।