লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
*আন্দোলন আছে**বৃহত্তর ভাবনা নেই**তাই গতি নেই* সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় অভূতপূর্ব নাগরিক অসন্তোষ এবং তার পরিনামে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের চেহারা দেখা গিয়েছে। এই জন অসন্তোষের পিছনে দুটি মূল কারণ ছিল। একটি অভিযোগ ধর্ষণ ও খুনের, অপরটি দূর্নীতির। অল্পবয়সী চিকিৎসকরা সহকর্মীর খুন , ধর্ষণের বিরুদ্ধে এবং সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নানা দূর্নীতির অভিযোগ সামনে এনে আন্দোলনে নেমেছেন। কিছু সিনিয়র চিকিৎসক ও তাদের সমর্থন করেন। শহরের বাঙালি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ও তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামেন।
সেই আন্দোলন এখন অনেকটাই থিতিয়ে এসেছে। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের যে উপস্থিতি চোখে পড়েছিল তা আর নেই।ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল তার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সিবিআই এর হাতে চলে গিয়েছে। এটা আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের দাবি ছিল। এই অবস্থায় সহকর্মীর ধর্ষণ ও খুনের বিচার চাওয়া থেকে চিকিৎসক আন্দোলনকারীরা সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নানান দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের অভিমুখকে তীব্র করেন। কিন্তু আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন যে শহুরে মধ্যবিত্ত মানুষ তাঁদের প্রায় সবাই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নির্ভরশীল নয়। তাই সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা সরাসরি তাদের স্বার্থে আঘাত করছেনা। তারা একটি সফল মধ্যবিত্ত মেয়ের খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। ফলে ধীরে ধীরে তারা সরে গিয়েছেন। নির্যাতিতার জন্য ন্যায় বিচারের দাবি ছাড়া রয়েছে চিকিৎসকদের কয়েক দফা দাবি। এর মধ্যে রেফারেল সমস্যার সমাধান, চিকিৎসা কেন্দ্র গুলিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও কর্মী ঘাটতি মেটানো। এবং সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্ৰিক কাঠামোর উন্নয়ন। এই দাবি গুলি যে অত্যন্ত ন্যায্য তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু এই দাবি গুলি মিটলে তো শুধু মাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে যাবে। মনে রাখা দরকার যে পশ্চিম বঙ্গে এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারেই জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। এখনো রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ গ্ৰাম ও মফস্বলে বাস করেন। সেখানে গ্ৰামীন ও ব্লক স্তরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার, নার্স, কর্মী, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির ভয়ানক ঘাটতি রয়েছে। জেলা স্তরে হাসপাতালের সংখ্যা না বাড়িয়ে এই দিকে জোর দিলে সমস্যা মিটতে পারে। প্রাথমিক স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষমতা বাড়ালে চিকিৎসকদের রেফার করে জেলা বা শহরের হাসপাতাল গুলিতে রোগী পাঠানোর সমস্যা কমবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো বেশিরভাগ মানুষের কাছে ন্যূনতম খরচে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এই কাঠামো তৈরি হলে সরকার কে স্বাস্থ্য বীমার পিছনে বিপুল অর্থ খরচ করতে হবে না। এবার আসি দূর্নীতির কথায়। ক্ষমতার দন্ড ই যে দূর্নীতির উৎস তা প্রায় সবাই জানেন। তাই দূর্নীতি সেই ক্ষমতার সিস্টেম থেকে ই জন্মায়। এখানে ব্যক্তি গৌন , তাই দু একজন কেষ্ট- বিষ্টুকে নিশানা করে লাভ নেই। দেখতে হবে কীভাবে কোন বিষয় গুলোর কারণে দূর্নীতি হচ্ছে, সেগুলো কে চিহ্নিত করে তা দূর করার আন্দোলনে নামতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মত এই সামগ্ৰিক বিষয়গুলি বর্তমান আন্দোলনে অনুপস্থিত বলেই গ্ৰাম ও মফস্বলের মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না।