বিধি আছে বাঁধন নেই, সাফাই কর্মীদের মৃত্যু মিছিলে উদ্বিগ্ন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সাফাই কর্মীদের অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, নর্দমা এবং বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কারে শ্রমিকের ব্যবহার বন্ধ করতে দেশে একাধিক আইন রয়েছে। অথচ সেই আইনকে সরিয়ে রেখে সাফাই কর্মী ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এই অবস্থায় যথাযথ নিরাপত্তা মূলক সরঞ্জাম ছাড়াই ওই সাফাই কর্মীরা কাজ করতে বাধ্য হন। ফলে, বিষাক্ত গ্যাস বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এসে সাফাই কর্মী মৃত্যুর ঘটনার মিছিল চলছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি ভি রাম সুব্রামানিয়ন নর্দমা এবং সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজে কিভাবে যন্ত্র বা যন্ত্রমানব ব্যবহার করা যায় তা দেখতে পাইলট প্রজেক্ট শুরুর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি, সাফাই কর্মীদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য প্রান হারানো সাফাই কর্মীদের সংখ্যা প্রকাশে স্বচ্ছতা থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা। কমিশনের মতে সাফাই কর্মীদের কাজের জন্য অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যু যেমন কঠিন বাস্তব তেমনই ওই কাজ করতে বাধ্য হওয়াটাও একজন শ্রমিকের পক্ষে অত্যন্ত অসম্মানের। কিছু কিছু রাজ্য সাফাই করার পরিবর্তে যন্ত্র ব্যবহার প্রকল্প নিয়েছে। তবে, কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল মনে করেন, এই কাজ কীভাবে এগোচ্ছে সেদিকে নজর রাখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে এই কাজ করার উপরেও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি, এই কাছে বিশেষ একটি জাতি বা গোষ্ঠীর যে আনুপাতিক হারে সংখ্যায় বেশি সে কথাও জানিয়েছেন তিনি । সাফাই কর্মীর কাজ এবং হাত দিয়ে নর্দমা বা সেপ্টিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা দুয়ের মধ্যে পার্থক্য টানতে ২০১৩ সালে দেশে আইন পাস হয়। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কমিশন বলেছে সাফাই কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তা মূলক সরঞ্জাম দিতে হবে। এবং কাজের অস্বাস্থ্যকর দিক নিয়ে সচেতন করতে কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। সাফাই কাজে যে যন্ত্রের ব্যবহার হবে তা উৎপাদন উৎসাহ দিতে সরকারের উৎপাদক সংস্থাগুলি কে incentive দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে, যন্ত্রের ব্যবহার যে সাফাই কর্মীরা কাজ হারাবেন তাদের উপযুক্ত পুনর্বাসনের জন্য ও সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই সময়োচিত পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটেই ২০১৫ সালের কালিকটের একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়ছে। কালিকটের নর্দমা পরিষ্কার করতে নেমে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন দুই সাফাই কর্মী। উপযুক্ত নিরাপত্তা মূলক সরঞ্জাম না থাকায় তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনজনের ই মৃত্যু হয়। সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশের পরে অনেক হৈ চৈ হয়। কিন্তু, তার পরের তথ্য হলো এই সময় কালের মধ্যে দেশে ৩৭৭ জন্য সাফাই কর্মীর ওই ভাবে মৃত্যু হয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে গত এক বছরে দিল্লিতে ১০০ জন সাফাই কর্মী প্রান হারিয়েছেন। নিন্দুকেরা বলে, বলে, জানাজানি না হলে সব মৃত্যু নথিভুক্ত হয় না।