Enemy Property
শত্রু সম্পত্তি বিষয়ি সম্প্রতি বেশ চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি অভিনেতা সইফ আলি খানের কাছ থেকে শত্রু সম্পত্তি হিসাবে দেড়শো কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া হবে বলে খবরে জানা যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে কলকাাতার রাজাবাজার এলাকার একটা সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসাবে চিহৃিত করেছে আদালত এবং ঐ সম্পত্তি থেকে বর্তমান বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শত্রু সম্পত্তি বিষয়টি কি তা অনেকের কাছে অজানা। এই বিষয়টি সমাজ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। শুধু তাই নয় শত্রু সম্পত্তি নামের পরিবর্তন দাবী করেছে। কেন দাবী করছেন পুরো লেখাা তুলে ধরা হল।
Photo Courtesy by Facebook

“১৯৪৭ এ ভারত ভাগ হওয়ার পর ভারত থেকে মুসলমানরা পাকিস্তানে চলে গিয়েছে আর পাকিস্তান থেকে হিন্দু আর শিখরা চলে গিয়েছে ভারতে। চলে গিয়েছে না বলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বলাটা ঠিক। পাকিস্তান ছিল দুটো, এক পশ্চিম, আরেক পূর্ব। পশ্চিম পাকিস্তানে মূলত পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, বিহারের মুসলমানরা (৭০-৮০ লক্ষ) গিয়েছিল। আর পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানরা (৫-৬ লক্ষ)। একই রকম পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাঙালি হিন্দুরা চলে গিয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য অঞ্চলে (২০-৩০ লক্ষ), আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অবাঙালি হিন্দুরা আর শিখরা চলে গিয়েছিল ভারতের পাঞ্জাব এবং অন্যান্য অঞ্চলে (৬০-৭০ লক্ষ)। যারা বাড়িঘর বিক্রি না করে, বা বিনিময় না করে, ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের সম্পত্তিকে ভারত এবং পূর্ব -পশ্চিম– দুই পাকিস্তানেই বলা হতো ”শত্রু সম্পত্তি” বা enemy property।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠেছে স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র , বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে শত্রু সম্পত্তির নাম বদলে অর্পিত সম্পত্তি রাখা হয়। কারণ যে হিন্দুরা দেশ ছেড়েছে তারা শত্রু নয়। তারা কোনও শত্রুতা করেনি দেশের বিরুদ্ধে। বরং যতদিন বেঁচেছিল ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষগুলো দেশকে ভালবেসে গিয়েছে, দেশের জন্য কেঁদেই গিয়েছে । একই রকম ভারত ছেড়ে যারা পাকিস্তানে গিয়ে , অথবা যারা পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে সেটল করেছে, তারা কেউ তাদের জন্মের দেশের, তাদের বাপঠাকুর্দার দেশের শত্রু নয় ।
আজও কিন্তু ভারত এবং পাকিস্তানে ফেলে যাওয়া সম্পত্তির নাম ‘শত্রু সম্পত্তি’ই রয়ে গিয়েছে। আজও ওই দুই দেশ শত্রু সম্পত্তির নাম পরিবর্তন করেনি। শত্রু সম্পত্তি নামটি না পরিবর্তন করলে যারা ভারত ভাগের ভিকটিম, সেই সাধারণ জনগণের ওপর, অন্যায় করা হয়। দেশ ভাগ করেছিল রাজনীতিকরা। দাঙ্গার ইন্ধনও তারাই দিয়েছিল। আগেই বলেছি জনগণ তাদের জন্মের দেশের শত্রু ছিল না। সুতরাং তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিকে শত্রুর সম্পত্তি বলে আর না ডাকা হোক। বাংলাদেশের মতো করে ভারত আর পাকিস্তানও এই সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি বলেই ডাকুক। এইটুকু নিবেদন।”
