লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
১৯৪৭ সালের ১৫ ই অগাস্ট। ভারতবর্ষ থেকে সাম্রাজ্য গোটালো ব্রিটিশরা। ভারত ভাগ হয়েই উপমহাদেশে এক নতুন দেশের জন্ম হল নাম পাকিস্তান। জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ নিয়ে পথচলা শুরু হয় পাকিস্তানের এলিট শাসক ও সামরিক বাহিনীর রাশ হাতে থাকা পঞ্জাবী সামরিক অফিসারদের। যার ফল ১৯৪৮ থেকে তিনটি যুদ্ধ এবং ধারাবাহিক ভাবে ভারতের মাটিতে জঙ্গি হানায় মদত দেওয়া। শুধু মাত্র ভারতে জঙ্গি হানায় যাতে ছেদ না পড়ে তার জন্য পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অসংখ্য জঙ্গি শিবির চলছে পাক সেনার প্রত্যক্ষ সাহায্যে। পাকিস্তানের প্রধান গুপ্তচর সংস্থা আই এস আই মাদক পাচারে যুক্ত। কারণ ওই পাচার থেকে পাওয়া অর্থ জঙ্গি শিবিরের প্রশিক্ষণের খরচ যোগানোর কাজে লাগে।সম্প্রতি পহেলাগামে কাপুরুষোচিত জঙ্গি হানা এই পাক চক্রান্তের ই অঙ্গ। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি হামলার সমুচিত জবাব দিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। তবে, ভারত জানে এই অপরাধপ্রবণ প্রতিবেশীর বিষদাঁত ভাঙতে শুধু সমরাস্ত্র নয় মগজাস্ত্রের ও প্রয়োজন রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে পৃথিবীর ৩০ টির ও বেশি দেশে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে ভারতের সাতটি সর্বদলীয় সংসদীয় দল। তাঁরা দেশে দেশে গিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে পুষ্ট সন্ত্রাসবাদ যে শুধু ভারতের নয় সমগ্ৰ বিশ্বের বিপদ সে কথাই বোঝাবেন। পাশাপাশি, এ কথা ও বোঝাবেন যে যুদ্ধ ভারতের লক্ষ্য না হলেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে শুন্য সহ্যমাত্রাই ভারতের নীতি। ২০২৫ এ ভারতের অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য ১৯৭১ সালের ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের সাফল্য কে মনে পড়ায়। তবে, এবার আমরা পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের আরো গভীরে গিয়ে আঘাত করেছি। ৭১ এর যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যের পাশাপাশি কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে কোনঠাসা করেছিল ভারত। ২০২৫ শের মতো সেবার ও ভারতীয় সাংসদের দল বিদেশের মাটিতে গিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গনহত্যার দিনলিপি তুলে ধরেছিলেন। ভারতের সামনে তখন দুটি সুবর্ণ সুযোগ ছিল। একটি হল প্যারিসে ইন্টার – পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বার্ষিক সভা। সেখানে ৬০টি দেশ থেকে ৫০০ জন সাংসদ উপস্থিত হয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের ২০০ জন পর্যবেক্ষক। তৎকালীন লোকসভার অধ্যক্ষ জি এস ঢিলোঁর নেতৃত্বে ১০ জন ভারতীয় সাংসদ প্রতিনিধি দল সেই সভায় পূর্ব পাকিস্তানে পাক সেনাবাহিনীর অপরাধের কথা পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করেছিলেন। ভারতের সংসদীয় কূটনীতির এই প্রয়াসে সাফল্য সেদিন প্রমানিত হয়েছিল। সপ্তাহব্যাপী ওই অধিবেশনে ভারতের কূটনীতিক চালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি দেশ তাদের সংসদীয় প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠিয়েছিল। তারা ভারতে এসে পাক সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রমাণ নিজেদের চোখে দেখেছিলেন। এর ফলে ৭১ এ ভারত-পাক যুদ্ধে বিশ্বজনমতের গরিষ্ঠ অংশ ভারতকে সমর্থন করেছিল।
