BSF escorts a family from Birbhum district across the Bangladesh border to work in Delhi
নিজস্ব প্রতিবেদন
কাজের জন্য স্বামীর সঙ্গে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিল্লীতে বেশকয়েক বছর ধরে কাজ করছিল বীরভূমের সোনালী সুইটিরা। কদিন আগে তাদের বাংলাদেশী তকমা দেয় দিল্লী পুলিশ। বৈধ আধার কার্ড, বৈধ ভোটার কার্ড দেখানোর পর ও বিশ্বাস করা হয়নি তারা ভারতের নাগরিক। বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই তাদের কপালে বাংলাদেশী তকমা দিয়ে বিএসএফের সাহায্যে নাবালক পুত্র কন্যাসহ তাদের বাংলাদেশের সীমা পার করে দেওয়া হয়। কাঁটাতারের ওপার থেকে কিভাবে আবার বীরভূমের মাটিতে ফিরবেন তারা সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাদের। এই করুণ বাস্তব কাহিনী সামাজ০িক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ও পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাম বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম। কি লিখেছেন তিনি পুরোটাই তুলে দিলাম।

“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাশয়, আপনি বাংলায় এসে অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এবার আমি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি একজন মহিলার সঙ্গে—সুইটি বিবি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমি বীরভূমের বাসিন্দা এবং একজন ভারতীয় নাগরিক।
নিচের এই ভিডিওতে তিনি নিজের জীবনের যে এক অসহনীয় দুর্দশার কথা জানাচ্ছেন, যেটি আপনার শোনা প্রয়োজন।
সুইটি বিবি বীরভূম জেলার মুরারই বিধানসভা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে এই মাটিতে বসবাস করে আসছে। কিন্তু না, এই মুহূর্তে তিনি তাঁর পৈতৃক বাড়ি থেকে কথা বলছেন না। তিনি এখন বাংলাদেশে—কারণ দিল্লি পুলিশ তাঁকে জোর করে সেখানেই পাঠিয়ে দিয়েছে, আরও পাঁচজনের সঙ্গে, যাঁদের মধ্যে রয়েছে তিনজন শিশু।
কি দুঃখজনক! ভারতীয় নাগরিক হয়েও তাঁদের একমাত্র “অপরাধ” ছিল দিল্লিতে বাংলা ভাষায় কথা বলা। তাঁরা ভাবতে পারেনি যেখানে তাঁরা বহু বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন, সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় এসেই তাদের বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দেবে।
তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন সোনালী খাতুন, যিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন তিনি বাংলাদেশে অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন—শুধু “বাঙালি” হওয়ার কারণে। এমন এক দেশে, যেখানে তাঁর নিজের সরকারও তাঁকে রক্ষা করতে ব্যর্থ।
নরেন্দ্র মোদী জি, আপনি দুর্গাপুরের সভা থেকে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু সুইটি কিংবা সোনালীর নাম একবারও নেননি। তাঁরা ভারতীয় নাগরিক, এবং একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের অধিকার রক্ষা করা আপনার সাংবিধানিক দায়িত্ব।
আপনি বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিশ্চয়ই, নিন।
আমরা প্রকৃত অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করায় বাধা দিচ্ছি না।
কিন্তু আমাদের প্রতিবাদ সেইসব নির্দোষ বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে—যাঁরা আজ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন।
আপনি যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ রোধ করতে চান, তাহলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী—BSF কেই তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
এবার আপনার দুর্গাপুর বক্তৃতা থেকে কিছু বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করি:
১. আপনি বলেছেন, বিজেপি বাংলায় “সত্যিকারের উন্নয়ন” আনবে। কিভাবে? যখন আপনার দলের নেতারাই বাঙালিদের “রোহিঙ্গা” বলে অপমান করেন? আমাদের এই মাটিতে শতাব্দী প্রাচীন শিকড় থাকা সত্ত্বেও তাঁরা আপনাদের কাছে অনুপ্রবেশকারী? রোহিঙ্গা?
২. অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তো বললেন, কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যে যারা হেনস্থার শিকার ভারতীয় নাগরিক—তাঁদের জন্য আপনি একটিও শব্দ খরচ করলেন না কেন?
৩. আপনার দলের নেতা বলছেন, ধৃত সবাই মুসলিম এবং রোহিঙ্গা। আপনি কি নিশ্চিত, তাঁদের সবার পরিচয় সম্পর্কে?
৪. রাজবংশী, মাতুয়া সহ বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও এই বৈষম্যের শিকার। তাঁরা কি রোহিঙ্গা?
৫. কেন আপনার সরকার ক্রমাগত বাঙালিদের লক্ষ্য করে এমন বৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ করছে?
৬. আপনি “জয় মা কালী” ও “জয় মা দুর্গা” বলেছেন। তাহলে সেই বাঙালি কন্যারা—যাঁরা মায়ের প্রতীক—তাঁদের নিপীড়নকে আপনি কীভাবে ন্যায়সঙ্গত বলেন?
৭. আপনি “নতুন বাংলা”-র স্বপ্ন দেখেন। সেই নতুন বাংলায় কি আমাদের নিজেদের রাজ্যেই বাংলা বলাও নিষিদ্ধ হবে?
৮. সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো—আপনার দুর্গাপুর সফরের পরই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি ফের শুরু হয়েছে। এটা কি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল?
আমি আপনার কাছে জানাতে চাই—প্রায় ১.৫ কোটি শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলায় আসেন কাজের জন্য এবং বছরের পর বছর এখানে নির্বিঘ্নে বসবাস করেন। আপনি এমন একটি ঘটনাও দেখাতে পারবেন না যেখানে তাঁদের কাউকে হয়রানি করা হয়েছে।
কারণ বাংলা, সব সময় সবার ঘর।
আপনি প্রশ্ন করেছেন—“বাঙালিরা বাইরে কাজ করতে যাবে কেন?”
তাহলে মনে রাখবেন—সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক কিন্তু বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকেই আসেন।
আমরা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী চাই, যিনি আমাদের রক্ষা করবেন—ভাগ করবেন না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের -এর নেতৃত্বে আমরা আইনত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি—সুইটি, সোনালীদের মতো নির্দোষ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য।
আর হ্যাঁ, আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াই চালিয়ে যাব—সকল বাংলা ও বাঙালিবিরোধী অপশক্তিকে রুখে দিতে।”
