SIR আতঙ্কে ফের বাংলায় বৃদ্ধের মৃত্যু এর দায় কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেবেন প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতার

SIR Panic Death

মনিরুল হোসেন

উত্তর ২৪ পরগণার পানিহাটির প্রদীপ করের পর বীরভূমের ইলমবাজারের বৃদ্ধ ক্ষিতীশ চন্দ্র মজুমদার এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন।ক্ষিতীশ বাবুর মেয়ে তাঁর বাবার আত্নঘাতীর ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন খবরে আতঙ্কিক হয়েই। গলায় দড়ি দিয়ে নিজের জীবন শেষ করেছেন বলে দাবী করা হয়েছে।

 ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ক্ষিতীশ বাবুর নাম না থাকার কারণে তিনি মনে মনে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এই নিয়ে এসআইআর লাগু হওয়ার পর তিন দিনে দু জন প্রবীন আত্মঘাতী হলেন। পানিহাটির প্রদীপ কর ও ইলম বাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার।

এছাড়া কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা খাইরুল শেখ একই কারণে অবসাদে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি কোন ভাবে প্রাণে বেঁচে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন এসব এড়ানো, রাজনৈতিকভাবে ঘটা দুঃখজনক ঘটনার জবাব কে দিবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন? মুখ্যমন্ত্রী পোস্ট করা পুরো অংশটি তুলে ধরা হল..

ভয়, বিভাজন ও ঘৃণার বিজেপির রাজনীতির করুণ পরিণতি আমরা দেখছি। নির্বাচন কমিশনের বাংলায় এসআইআর মহড়া ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই – বিজেপির নির্দেশে বুলডোজ করা মহড়া। একটার পর একটা এড়ানো যায় না এমন ট্রাজেডি ঘটেছে।

27শে অক্টোবর, খড়দহের পানিহাটির 57 বছর বয়সী প্রদীপ কর আত্মহত্যা করে মারা যান, একটি নোট রেখে যেখানে লেখা ছিল, “আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।” ”২৮শে অক্টোবর দিনহাটার কোচ বিহারের ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এসআইআর প্রক্রিয়ায় হয়রানির ভয়ে প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করেন।

আর আজ বীরভূমের ইলামবাজারে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন কোতয়ালী পশ্চিম মেদিনীপুরের 95 বছর বয়সী খিতীশ মজুমদার, এই আশঙ্কায় যে তিনি এবং তার পরিবার তাদের জমি দখল করে নিতে পারেন।

এসব এড়ানো, রাজনৈতিকভাবে ঘটা দুঃখজনক ঘটনার জবাব কে দিবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন? বিজেপি ও তার সহযোগীরা, যাদের চোখে এই ভয় সাইকোসিস ছড়িয়েছে, তারা কি মুখ খুললেন বলার সাহস পাবে?

এই মাটিতে জীবন দেওয়া ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধকে প্রাণ দিতে বাধ্য করা হয়েছে তার প্রমাণ দিতে। জাতির বিবেকের উপর এর থেকে গভীর ক্ষত আর কি হতে পারে? এটা শুধু ট্রাজেডি নয়- এটা মানবতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।যুগ যুগ ধরে বাংলার মানুষ সম্মানের সাথে বেঁচে আছে। আজ ওদের জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছে ওরা কি এখনো জন্মভূমির বাসিন্দা। এই নিষ্ঠুরতা অযৌক্তিক এবং দাঁড়াতে দেওয়া উচিত নয়।

আমি প্রত্যেক নাগরিককে অনুরোধ করছি: উস্কানি দেবেন না, বিশ্বাস হারাবেন না, এবং কোন চরম পদক্ষেপ নেবেন না। আমাদের মা মাটি মানুষ সরকার আপনার পাশে দাঁড়ালেন। আমরা বাংলায় এনআরসি বাস্তবায়িত হতে দেব না- সামনের দরজায়ও না, পেছনের দরজায়ও না।আমরা একজন বৈধ নাগরিককে “বাহির” হিসাবে চিহ্নিত করার অনুমতি দেব না। ”

আমাদের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত, আমরা মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য এবং বিজেপি এবং তাদের সহযোগীদের ঘৃণ্য এজেন্ডা পরাজিত করতে আমাদের জাতির সামাজিক গঠন ছিন্ন ভিন্ন করতে লড়াই করব।

এই পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তি দূর করতে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, এসআইআর সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য চালু করা হয়েছে একটি টোল-ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর — ১৮০০-১১-১৯৫০। ভোটাররা সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলে এই নম্বরে ফোন করতে পারবেন।