রাষ্ট্রের কাছে ইনসাফ চাইছেন ভোদু সেখ কিন্তু রাষ্ট্রবাদী নেতারা নীরব তাঁরা জাতের বিচারে ব্যস্ত

Father seeks justice for daughter

মনিরুল হোসেন

বাংলা জুড়ে আজ এসআইয়ের কাজ চলছে। তখন বীরভূমের পাইকর গ্রামের ভোদু শেখ ও তাঁর স্ত্রী ২০০২ সালের ভোটার লিষ্ট দাঁড়িয়ে। তিনি ও তাঁর পরিবার যে এধেশের নাগরিক। এদেশেতেই মেয়ের জন্ম তা প্রমাম করতে চান। কারণ ভোদু শেখের মেয়ে জামাইকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র। অবৈধ নাগরিক হিসাবে অন্য রাষ্ট্রে জেলবন্দী রয়েছে। চলুন এই হত ভাগ্যদের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরি।

একবার কেউ ভেবে দেখেছেন কি? মালদার মহদিপুর সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নয় নবাব চাঁপাই গঞ্জের জেলের ভেতর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের বাংলার আমাদের দেশের ৬ নাগরিক দিন কাটাচ্ছে। নিজের রাষ্ট্র তাদের বিদেশি তকমা দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে। তাদের অপরাধ তারা বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাই তারা বাংলাদেশী। আধার কার্ড ভোটার কার্ড দেখিয়েও কোন কাজ হয়নি।
প্রায় চার মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন সহ ৬ জনকে দিল্লি থেকে আসামে তুলে এনে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে বাংলাদেশ নাগরিক বলে বিএসএফ ওপারে জোর করে যেতে বাধ্য করেছে। তাদের মধ্যে সোনালী খাতুন যার জন্ম বীরভূমের পাইকর গ্রাম। যার বাবা মার ১৯৫২ সালের দলিল রয়েছে। শুধু তাই নয় ২০০২ এর ভোটার লিস্টে সোনালীর বাবা আমার নাম রয়েছে। অর্থাৎ তারা প্রত্যেকেই শুভেন্দু অধিকারী ভাষায় রাষ্ট্রবাদী ভারতীয়। অথচ সোনালী সহ প্রত্যেকেই বাংলার নাগরিক প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র মানতে চাইনি যে তারা ভারতীয় নাগরিক।

পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের উদ্যোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়। গত এক মাস আগে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে জানিয়েছে সোনালী খাতুন সহ ৬ জন প্রত্যেকেই ভারতীয় নাগরিক। চার সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের জেল থেকে তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য সব রকম উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এত কিছুর পরেও দিল্লি পুলিশ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অবৈধ নাগরিক হওয়ার জন্য বাংলাদেশ কোর্টে সোনালী সহ ছজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলাতেও বাংলাদেশের কোট রায় দিয়েছে এরা প্রত্যেকেই ভারতীয়। তাই ভারত সরকারকে অবিলম্বে সোনালীদের ফিরিয়ে নেয় সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সব রকমের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ কোর্ট। কিন্তু তারপরেও কেন্দ্র সরকারের কোন হেলদোল চোখে পড়ছে না। উল্টে শোনা যাচ্ছে সোনালীদের অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে কেন্দ্র সরকার।

ভাবুন অবস্থা। ভারতের একজন প্রকৃত নাগরিকের প্রতি প্রশাসনের যে অমানবিক আচরণ তা যে কোন সুস্থ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারবেন না। এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রের এই অমানবিকতা এই প্রবল টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে উলুখাগড়ায় প্রাণ যাওয়ার অবস্থা সোনালীদের। তাই যখন এস আই আর নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে তখন সোনালীর মত বেশ কিছু মানুষ চূড়ান্ত অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন। এই অন্যায়ের কারণ যারা তারা কি আদৌ শাস্তি পাবেন না এভাবেই গরিব মানুষের উপর অত্যাচার বেড়েই চলবে। তাঁদের বিদেশী নাগরিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে।

এই ছয়জনই ভারতের নাগরিক। কিন্তু এদের জোর করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে এরা সকলেই ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশের কারাগারে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বন্দী রয়েছে। বাংলাদেশের কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে এরা সকলেই ভারতের নাগরিক। কলকাতা হাইকোর্ট চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্র সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে চলেছে কেন্দ্র সরকার। উল্টে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছে কেন্দ্র। এই ছয়জনের মধ্যে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি। ডান দিকে সোনালীর বাবা-মার হাতে ধরা আছে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে তাদের নাম। তারা যে প্রকৃত ভারতীয়। এবং তার সন্তান যে প্রকৃত ভারতীয় তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। আর কতদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশী দাগিয়ে অমানবিক কাজ করে যাবে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতৃত্ব সোনালী বিবিদের নিয়ে কেন কথা বলছে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।