চাপে কেন্দ্র সরকার বাংলার সুনালি খাতুনদের জামিন দিল বাংলাদেশের আদালত অবিলম্বে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিল সুপ্রীম কোর্ট

Sunali Khatun Case

নিজস্ব সংবাদদাতা:

সন্তানসম্ভাবা সুনালি খাতুন সঙ্গে স্বামী দানিশ শেখ ৮ বছরের আর সন্তানের হাত ধরে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলের মধ্যে থেকে বের হলেন। সঙ্গে আরও তিন জন।সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালত আজই তাঁদের ভারতীয় বলে প্রমাণিত হওয়ায় জামিন মঞ্জুর করেছে।

জুন থেকে নভেম্বর মাঝে কেটে গেছে প্রায় ৬ মাস।সুনালিদের দিল্লীর রোহিনী এলাকা থেকে বাংলাদেশী সন্দেহে গ্রেফতার করে ২৪ জুন দিল্লী পুলিশ। ২৫ জুন তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২৬ জুন বিএসএফ আসাম সীমান্ত দিয়ে এই ৬ জনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। সেই থেকে বাংলাদেশে অসহায় অবস্থায় দিন কাটছিল তাদের।বাংলাদেশের এক ব্যক্তি তাঁদের কথা তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যমে। সেই খবর দেখেই সুনালিদের ফেরাতে মাঠে নামেন পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজ্যসভার সাংসদ অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তাদের গ্রেফতার করে। এতদিন তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে বন্দী ছিলেন।

কেন্দ্র সরকারের কাছে রাজ্য় সরকারের পক্ষ থেকে প্রমাণসহ জানানো হয় এই ঠ জন বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা। সুনালীর বাবাব ১৯৫৩ সালের জমির দলিল পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বার বার দাবী করে এরা বাংলাদেশী। সেই সুরে গলা মেলায় এ রাজ্যের বিজেপি নেতারাও। হাল ছাড়েনি সামিরুল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ লড়াই জারি রাখে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়। একাধিকবার শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় এরা সকলেই ভারতের নাগরিক। এক মাসের মধ্যে তাদেের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তাতে ও কাজ হয় কাজ হয়নি। সুপ্রীম কোর্টে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে সুপ্রীম। আজ সুপ্রীম কেন্দ্রের দাবি কার্যত উড়িয়ে দিয়ে দেশে ফেরানো নির্দেশ দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে সাংসদ সামিরুল ইসালাম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন “

আজ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আবারও বাংলাদেশ থেকে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা সুনালি খাতুন ও অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনও যাচাই ছাড়াই সুনালি খাতুন ও আরও পাঁচজনকে বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল। শুনানির সময় সলিসিটার জেনারেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সুনালি এবং তাঁর আট বছরের ছেলেকে ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সম্মতি দেন। মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে আগামী পরশু, বুধবার।

এদিকে, বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জের একটি আদালত অবৈধভাবে বাংলাদেশে নির্বাসিত সকল ব্যক্তিকে, সুনালি-সহ, জামিন মঞ্জুর করেছেন।

এই দুই আদালতের নির্দেশ বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকারের জন্য আরও এক বড় ধাক্কা, বিশেষত কলকাতা হাই কোর্টের সেই আগের নির্দেশের প্রেক্ষিতে, যেখানে কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে সবাইকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা কখনওই মানা হয়নি।

আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে আমরা সুনালি ও অন্যান্যদের ন্যায়ের লড়াই লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছি তাদের অবৈধ নির্বাসনের দিন থেকেই। শুধু বিজেপির বাঙালি-বিরোধী মানসিকতার কারণেই তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল।

সুনালি খাতুন মামলার সময়রেখা

১. ২৩ জুন, ২০২৫: দিল্লি পুলিশ “সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারী” হিসেবে সুনালি ও আরও পাঁচজনকে আটক করে।

২. তিন দিনের মধ্যেই: কোনও যাচাই ছাড়াই সকল ছ’জনকে বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হয়।

৩. ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

৪. সময়সীমা পেরোনোর পর: কেন্দ্র ওই নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়।

৫. ২৫ নভেম্বর, ২০২৫: সুপ্রিম কোর্ট ফের কেন্দ্রকে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনতে বলে।

৬. আজ: বাংলাদেশের একটি আদালত সুনালি ও অন্যান্য সকলকে জামিন প্রদান করে।

৭. আজ: সুপ্রিম কোর্ট সুনালি ও তাঁর আট বছরের ছেলেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

এখন প্রশ্ন থেকেই যায় — বিজেপি শেষ পর্যন্ত কী করবে?”