মনিপুরে হিংসা বন্ধ হচ্ছে না কেন? আসল কারণ জানেন কি?

Manipur Unrest

লেখক- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

রকেট, হ্যান্ড গ্রেনেড, ডেটোনেটর, স্টার্নগ্ৰেনেড, স্টিংগারগ্ৰেনেড, স্থানীয় ভাবে তৈরি ‘পাম্পি’ নামে পরিচিত ইম্প্রোভাইজড মর্টার সাধারণ অস্ত্রের মতো ব্যবহার হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে দুবার ড্রোন হামলাও হয়েছে। দেশের মধ্যে এই প্রথম কোনও গোষ্টীর উপর ড্রোন নিয়ে আক্রমণ শানানো হয়েছে। এই হলো ১৮ মাসের মনিপুর। ২০২৩ সালের মে মাসে পাহাড়ের বাসিন্দা কুকি জো সম্প্রদায় ও সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তারপর থেকে অশান্ত, অগ্নিগর্ভ মনিপুর। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে শতশত পরিবারের সংসার। ছিন্নভিন্ন, গৃহহীন, দগ্ধ ও ক্ষত বিক্ষত সাধারণ মানুষ। মহিলা ও শিশুদের বেছে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চলছে। অথচ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বলে চলেছে বহিরাগত শত্রুর কারণেই উত্তরপূর্বের ওই রাজ্য থেকে আইন শৃঙ্খলা উবে গিয়েছে। মনিপুরের সমতলের বাসিন্দারা পাহাড়ে জমির অধিকার, বাসস্থান তৈরি ও সরকারি চাকরিতে সুবিধা পাওয়ার জন্য তফসিলি জনজাতি হওয়ার দাবি তোলে। মনিপুর হাইকোর্ট সেই দাবি মেনে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সবুজ সংকেত দেয়। তারপর থেকে ইম্ফল উপত্যকা ভিত্তিক মেইতেই এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড় ভিত্তিক কুকি, জো সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

এই দীর্ঘ ও ব্যাপক হিংসার বিস্তার কে শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখার অর্থ ভাবের ঘরে চুরি করা। অতি প্রবল এই সামাজিক সংকট যার উৎস অনেক গভীরে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ কুকি, জো ও মেইতেই পরস্পর কে আক্রমণের যুক্তি হিসেবে অতীতের নৃশংসতার ঘটনাকে ব্যবহার করে চলেছে। দুপক্ষই নানান অস্ত্রে সজ্জিত সম্প্রদায় ভিত্তিক হানাদার বাহিনী কে ব্যবহার করছে। দুপক্ষের এই গভীর শত্রুতা কে চলতে দেওয়া দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক । বিশেষত, প্রতিবেশী কিছু দেশ যখন ভারতের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টায় সদা জাগ্রত। মনিপুরে যুযুধান দুই গোষ্টীর এই সংঘর্ষের মূল কারণ অর্থনৈতিক সংরক্ষণের সুবিধার প্রশ্ন। এই সমস্যাই মনিপুরকে হিংসার অগ্নি বলয়ে পরিণত করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনজাতি গোষ্টীর মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমস্যা রয়েছে। তার ই এ এক দূর্ভাগ্যজনক প্রতিফলন মনিপুরে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই ভয়াবহ সংকট মেটানোর দায়িত্ব সরকার এবং প্রশাসনের। কোনো ভাবেই এই দায়িত্ব এড়ানো যায় না। ১৮ মাস ধরে মনিপুরে রক্ত ঝরছে। কিন্তু সরকার এখনও কোনো সদর্থক পদক্ষেপ করতে পারে নি। প্রশাসনের প্রতি রাজ্যের মানুষের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্বাভাবিক জীবন যাপনে আশা শুন্যে বিলীন। যত দিন যাচ্ছে মনিপুরে জমি, সংরক্ষণ ও বৈধ বানিজ্যের দখল নিয়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আক্রমণ প্রতি আক্রমণ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এখনই সব রাজনৈতিক দল, সব গোষ্টী কে নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত। আর এই কাজ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং মনিপুর রাজ্য সরকারকে।