লেখক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
অতীতের সংসদীয় রীতিনীতির অনেকটাই মুছে ফেলেছে বিজেপি। সংসদের ইতিহাস বলে সংসদীয় রীতি অনুযায়ী বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে চলার পরম্পরা ছিল ভারতবর্ষে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার দিন থেকেই সেই পরম্পরা কে ত্যাগ করেছে বিজেপি সরকার। বিরোধীদের রাজনৈতিক ও সংসদীয় পরিসর সঙ্কুচিত করার আগ্ৰাসী নীতি নিয়েই চলছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এখন বিরোধী সাংসদদের হয় সাসপেন্ড করে নয়তো স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা না করেই সংসদে বিল পাস করানো হয়। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে শরিক নির্ভর হওয়ায় মনে করা হচ্ছিল হয়তো সেই নীতি বদলাবে। উল্টে দেখা গেল সংসদ চত্বরে শাসক-বিরোধী সাংসদদের ধ্বস্তাধ্বস্তিতে রক্ত ঝরলো। জওহর লাল নেহরু থেকে মনমোহন সিং পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীদের আমলে কিন্তু সংসদীয় রীতিনীতির পরম্পরা বজায় ছিল। শাসক বিরোধী সম্পর্ক এতটা তলানিতে কোনো দিন ই নামেনি। সংসদে শাসক বিরোধী এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি সৌধ তৈরির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে দেখতে হবে। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর স্মৃতি সৌধ কোথায় হবে তা এখনো স্থির করে নি কেন্দ্র। কেন স্মৃতি সৌধের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাতেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য হল না এই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি, মনমোহনের মৃত্যুর পরে দেশ বিদেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ রা যে ভাবে স্মৃতি চারণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা মেশানো প্রশংসা করেন তাতে কিছুটা চাপে পড়ে মোদী সরকার। ফলে, অভ্যাস জনিত পাল্টা চাপের অস্ত্র হিসেবে প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বেছে নেওয়া হয়। শুধু স্মৃতি সৌধ তৈরির ঘোষণা নয়, প্রণবের স্মৃতি সৌধের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও বেছে নেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে যমুনা তীরে রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থলে অন্য রাষ্ট্রনেতাদের পাশে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্মৃতি সৌধ তৈরি হবে বলে স্থির হয়েছে। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস। কারণ, প্রয়াত প্রণবের স্মৃতি সৌধ নিয়ে কংগ্রেস কখনো দাবি তোলেনি। তাই কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে প্রয়াত মনমোহনকে অসম্মান করার অভিযোগ তুললে কংগ্রেস নেত্রী প্রণব কন্যা শর্মিষ্ঠা দলের বিরুদ্ধে বাবাকে অসম্মান করার পাল্টা অভিযোগ তোলেন। পাশাপাশি, বাবার স্মৃতি সৌধ তৈরির ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি। প্রণব যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন তখন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন মনমোহন। তাই প্রণবকে তিনি ” স্যার” বলে সম্বোধন করতেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রণবকে “স্যার”বলেই সম্বোধন করতেন তিনি। কংগ্রেস জমানায় দলের ‘crisis man’ বলে পরিচিত প্রণবকে প্রধানমন্ত্রী না করা তাঁর প্রতি অবিচার বলে মনে করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ শিবির। ইউ পি এ আমলে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হলেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর ছিল। রাষ্ট্রপতি থাকার সময় আর এস এস প্রধান মোহন ভাগবতের আমন্ত্রণে সংঘের সভায় গিয়ে বক্তব্য ও পেশ করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে টানাপোড়েনও হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রনব কন্যা শর্মিষ্ঠার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় সেদিকে এখন দিল্লির রাজনীতির নজর রয়েছে।