টুসু পরবে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ কুড়মালি নববর্ষের শুরু

আজ কুড়মিদের নতুন বছর। কুড়মালি নববর্ষ। মকর সংক্রান্তিতে টুসু পরবে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ করেন তাঁরা। নববর্ষের প্রথম দিনটি তাঁদের কাছে খুবই শুভ দিন। ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত-কুড়মি সম্প্রদায়ের বছরকে বারো মাসে ভাগ করা হয়েছে ।যথাক্রমে মধু, বিহা, মওহা, নীরন, ধরন, বিহন, রপা, করম, টান, সহরই, মাইসর ও জাড়।

কুড়মি সম্প্রদায় প্রকৃতির পূজারী এবং তাঁরা কৃষিভিত্তিক জনজাতি । তাই সব পার্বনের সঙ্গে জুড়ে আছে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক আচার-অনুষ্ঠান।সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণ যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ অক্ষ আয়ন বা অক্ষায়ন। এই শব্দ থেকেই আইখ‍্যান যাত্রা। । তাই আইখ‍্যান যাত্রার দিনে কৃষি কাজের সূচনা করা হয়। একে তাঁরা বলেন হালচার বা হালপুইন‍্যা।

সকালে সারা বাড়ি ‘লাতা’ করেন। (লাতা করা হল গোবর দিয়ে সারা বাড়ি লেপে দেওয়া হয়।)  তারপরে স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু-বলদ বা মোষের সঙ্গে লাঙ্গল জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল করে বাড়িতে ফেরেন পুরুষরা। স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বাড়িতে বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ির বউ। গবাদি পশুর পা ধুইয়ে শিঙে তেল ও সিঁদুর মাখিয়ে তাদের বরণ করেন খুব যত্ন করে। বেতের তৈরি পাত্রে এদিন গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়।

কুড়মি সম্প্রদায়ের সামাজিক আন্দোলনের কর্মী অনুপ মাহাত বলেন, “আমরা ভারতের আদিম অধিবাসী, আমরা প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতিরই একটা অংশ কৃষি। কৃষিই আমাদের সবকিছু। তাই কুড়মালি নববর্ষের সূচনা হয় কৃষিকাজ দিয়েই।”আজ বিভিন্ন জায়গায় গরাম পূজাও হয়। যাতে গরাম ঠাকুর সারা গ্রামের সবার মঙ্গল করেন।”

পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া অর্থাৎ জঙ্গলমহলের সর্বত্র এই অনুষ্ঠান দেখা যায়। এরাজ্যের বাইরেও উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খণ্ড — অর্থাৎ সমগ্র ছোটনাগপুর অঞ্চলে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করেন এই রীতি। ছোটনাগপুরের বাইরে অসমে এই পরব পালন করতে দেখা যায়।